আজ এই আর্টিকেলে অ্যামপ্লিফায়ার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনায় যাব না। আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হচ্ছে পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার।
এই আর্টিকেলে যা যা থাকছে
- পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার কি
- পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার কেন ব্যবহার হয়
- পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ারের প্রকারভেদ
- অডিও ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার
- রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার
- ডিসি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার
- ক্লাস এ পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার
- ক্লাস বি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার
- ক্লাস এবি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার
- ক্লাস সি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার
- অন্যান্য ক্লাসের পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার
- অ্যাপ্লিকেশন
পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার কি?
ইনপুট সিগন্যালের পাওয়ারের অ্যামপ্লিচিউড বিবর্ধিত করার জন্য যে ইলেকট্রনিক অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার করা হয় তাকে পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার বলে। আউটপুট ডিভাইস যেমন স্পিকার, হেডফোন, আর.এফ. ট্রান্সমিটার ইত্যাদি পরিচালনার জন্য উপযোগী পাওয়ার উৎপাদন করাই পাওয়ার এমপ্লিফায়ার এর মূল কাজ। সাধারণত একটি অ্যামপ্লিফায়ার চেইনের সর্বশেষ স্তরে এই অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার হয়ে থাকে।উৎস হতে প্রাপ্ত ইনপুট সিগন্যালকে সরাসরি পাওয়ার এমপ্লিফায়ার এ প্রয়োগ করা হয় না। ইনপুট সিগনালকে প্রথমে প্রি-অ্যামপ্লিফায়ারের সাহায্যে বিবর্ধিত করা হয়। এরপর অডিও বা রেডিও সিগন্যালের ভোল্টেজ বা কারেন্টের মানে একটা নির্দিষ্ট লেভেলে উন্নীত হলে তা পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ারে প্রয়োগ করা হয়। বিষয়টি ভালোভাবে অনুধাবন করার জন্য নিচে একটি ব্লক ডায়াগ্রাম দেয়া হলো।
এক্ষেত্রে একটি মাইক্রোফোন ইনপুট সোর্স হিসাবে ব্যবহৃত হয়। মাইক্রোফোন থেকে প্রাপ্ত সিগন্যালের মাত্রা পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ারের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই প্রথমে একটি প্রি-অ্যামপ্লিফায়ার যেখানে সিগন্যালের ভোল্টেজ এবং কারেন্টের মান সামান্য বৃদ্ধি করা হয়। তারপর সিগনালটিকে টোন এবং ভলিউম কন্ট্রোল সার্কিটের মাধ্যমে পাস করা হয় যা অডিও সিগন্যালে প্রয়োজনীয় ফিল্টার করে নান্দনিক সমন্বয় করে। অবশেষে সিগন্যাল একটি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ারে দেয়া হয় এবং পাওয়ার amp থেকে আউটপুট স্পিকারে সরবরাহ করা হয়।
পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ারের প্রকারভেদ:
ব্যবহৃত সিগনালের ফ্রিকোয়েন্সির উপর নির্ভর করে পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ারকে নিম্নোক্ত তিন ভাগে ভাগ করা যায়-১। অডিও ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার:
এই ধরনের পাওয়ার amplifier দুর্বল অডিও (শ্রবণ যোগ্য ফ্রিকোয়েন্সী) সিগন্যালের পাওয়ার বৃদ্ধি করার জন্য ব্যবহৃত হয়। যেমন, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন ইত্যাদি স্পিকার ড্রাইভিং সার্কিটগুলিতে এ ধরনের অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহৃত হয়।২। রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার
রেডিও ট্রান্সমিশন সিস্টেমে মডুলেটেড সিগন্যালকে এন্টেনার মাধ্যমে দূর-দূরান্তে প্রেরণ করা হয় যেমন, AM/FM রেডিও, TV ব্রডকাস্টিং সিস্টেমে। এক্ষেত্রে হাজার হাজার কিলোওয়াটের সিগন্যাল এন্টেনায় প্রয়োগ করতে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সীর পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহৃত হয়।৩। ডিসি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার:
ডিসি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার PWM (Pulse Width Modulation) সিগন্যালের শক্তি বাড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতি মূলত ইলেকট্রনিক্স কন্ট্রোল সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়, যেখানে মোটর বা অ্যাকচুয়েটর চালানোর জন্য উচ্চ পাওয়ারের প্রয়োজন। ডিসি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার মাইক্রোকন্ট্রোলার সিস্টেম হতে ইনপুট গ্রহণ করে, আর শক্তি বৃদ্ধি করে ডিসি মোটর বা অ্যাক্টুয়েটরকে সংযোজিত সিগন্যাল অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করে।বিভিন্ন ক্লাসের পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার:
কোন সিগন্যালের পাওয়ার সঠিক ভাবে অ্যামপ্লিফাই করার জন্য ডিজাইনের সময় বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করা হয়। ডিজাইনের উপর ভিত্তি করে সার্কিটের অপারেশন এবং সিগন্যালের আউটপুট ওয়েভ ক্যারেক্টারিস্টিক ভিন্ন হয়ে থাকে। বিভিন্ন সার্কিটের বৈশিষ্ট্য এবং আচরণের উপর ভিত্তি করে পাওয়ার এমপ্লিফায়ারকে কয়েকটি ক্লাসে বিভক্ত করা হয়েছে।নিচে পাওয়ার এমপ্লিফায়ারের বিভিন্ন ক্লাস বর্ণনা করা হলো।
১। ক্লাস-এ পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার:
ক্লাস-এ অ্যামপ্লিফায়ার ইন ইনপুট সিগনালের সম্পূর্ণ অংশই অ্যামপ্লিফাই করা হয় অর্থাৎ ইনপুট প্রদত্ত সিগন্যালের সম্পূর্ণ অংশই বিবর্ধিত আকারে আউটপুটে পাওয়া যায়।ক্লাস-এ পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার |
উপরে একটি সিঙ্গেল ট্রানজিস্টার ব্যবহার করে একটি অ্যামপ্লিফায়ার ডিজাইন দেখানো হয়েছে যা ইনপুটে প্রদত্ত সিগন্যালের পজিটিভ এবং নেগেটিভ উভয় হাফ সাইকেলকে অ্যামপ্লিফাই করে। এই অ্যামপ্লিফায়ার হবিস্টদের মধ্যে খুব জনপ্রিয়।
ক্লাস-এ পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার কার্যত একটিভ এলিমেন্ট (যে ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্ট পাওয়ার অ্যামপ্লিফাই করার জন্য ব্যবহার করা হয়, এক্ষেত্রে একটি ট্রানজিস্টর) সবসময় অন অবস্থায় থাকে। ফলে একটিভ এলিমেন্ট প্রচুর পরিমাণে গরম হয় এবং পাওয়ার অপচয় করে। কোন পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার সাধারণ অবস্থায় সর্বোচ্চ ২৫% এবং ট্রান্সফর্মার কাপলিং অবস্থায় সর্বোচ্চ ৫০% পর্যন্ত দক্ষতা দিয়ে থাকে।
২। ক্লাস-বি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার:
ক্লাস-এ টাইপ পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ারের পাওয়ার অপচয় রোধের জন্য ক্লাস-বি টাইপ পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার ডিজাইন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে অ্যামপ্লিফাই করার জন্য যে একটিভ এলিমেন্ট ব্যবহার করা হয় সেটা সিগন্যালের যেকোনো অর্ধ সাইকেলের জন্য পাওয়ার অ্যামপ্লিফাই করে। সম্পূর্ণ সিগনাল এর জন্য আউটপুট পেতে হলে এক্ষেত্রে দুটি কমপ্লিমেন্টারি একটিভ এলিমেন্ট ব্যবহার করা হয়। তবে ক্লাস-বি পুশপুল পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ারে ট্রান্সফরমার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফলে যেকোনো অর্ধ সাইকেলের জন্য একটি একটিভ এলিমেন্ট অন থাকে বলে তাপ উৎপাদন কম হয় আর একটিভ এলিমেন্টের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পায়।ক্লাস-বি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ার |
একটি ট্রানজিস্টার সিগন্যালের পজেটিভ সাইকেলকে বিবর্ধিত করে আর অন্য আরেকটি ট্রানজিস্টার সিগন্যালের নেগেটিভ হাফ সাইকেল কে বিবর্ধিত করে। এভাবে আউটপুটে 360 ডিগ্রির পূর্ণাঙ্গ বিবর্ধিত সিগন্যাল পাওয়া যায়।
ক্লাস-এ অ্যামপ্লিফায়ারের তুলনায় ক্লাস-বি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ারের ডিজাইন উন্নততর। ফলে এতে পাওয়ার অপচয় কম হয় এবং দক্ষতা বেশি পাওয়া যায়। তাত্ত্বিকভাবে ক্লাস-বি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ারের দক্ষতা ৭৫% পর্যন্ত হয়ে থাকে।
একটির পর একটি হাফ সাইকেল দুটি আলাদা ট্রানজিস্টরে বিবর্ধিত হয় বলে ক্লাস বি পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ারে ক্লাস এ টাইপ অ্যামপ্লিফায়ারের তুলনায় ডিষ্টর্শন বেশি দেখা দেয় অর্থাৎ সিগনাল টু নয়েজ রেশিও বেশি হয়।
৩। ক্লাস-এবি অ্যামপ্লিফায়ার:
ক্লাস-এবি অ্যামপ্লিফায়ার ক্লাস এ এবং ক্লাস বি অ্যামপ্লিফায়ারের সমন্বিত রূপ। এ ধরনের অ্যামপ্লিফায়ার সাধারণত ক্লাস এ অ্যামপ্লিফায়ারের ইফিসিয়েন্সি বাড়ানোর জন্য এবং ক্লাস বি অ্যামপ্লিফায়ারের ডিষ্টর্শন কমানোর জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।ক্লাস-এ অ্যামপ্লিফায়ারের মত ক্লাস-এবি অ্যামপ্লিফায়ারে ফ্রিকুয়েন্সি রেসপন্স ভালো অন্যদিকে ক্লাস-বি অ্যামপ্লিফায়ারের মত ভালো দক্ষতা পাওয়া যায়। ক্লাস-এবি টাইপ পাওয়ার অ্যামপ্লিফায়ারের দক্ষতা সাধারণত ৬০% পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ট্রানজিস্টার ইনপুট এবং আউটপুট পরস্পর বিপরীত কেন?
উত্তরমুছুনবেজে প্রযুক্ত সিগনালের উপর ভিত্তি করে কালেক্টর-ইমিটার ভেরিয়েবল রেজিস্টার হিসেবে কাজ করে। বেজ ভোল্টেজ বাড়লে কালেক্টর-ইমিটার হ্রাস পায়। বিষয়টি অনুধাবনের জন্য একটি ফিক্সট রেজিস্ট্রার ও একটি ভেরিয়েবল রেজিস্টর সিরিজে সংযুক্ত করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে পারেন। এক্ষেত্রে আউটপুট রেজিস্টার দুটির মধ্য হতে নেয়া হবে।
মুছুনধন্যবাদ ভাই,অনেক সুন্দর করে বিস্তারিত বর্ণনা করার জন্য।
উত্তরমুছুন