প্রযুক্তিগত দক্ষতার ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে

ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন

ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স

এমপ্লিফায়ার হিসেবে অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার একটি আদর্শ লিনিয়ার ইলেকট্রনিক ডিভাইস। ইলেকট্রনিক সিগন্যালকে এমপ্লিফাই করার পাশাপাশি ফিল্টার, কন্ডিশনিং এবং গাণিতিক প্রক্রিয়া(যেমন যোগ, বিয়োগ, ইন্টিগ্রেশন, ডিফারেন্সিয়েশন ইত্যাদি) কাজে অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার ব্যাপক ব্যবহৃত একটি ইলেকট্রনিক কম্পোনেন্ট।

একটি অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার ইনপুট সিগন্যালকে শত হাজার গুনে বিবর্ধিত করতে পারে। ফিডব্যাক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার বৈশিষ্ট্য যেমন গেইন, ইনপুট ইম্পিডেন্স, আউটপুট ইম্পিডেন্স, ব্যান্ডওয়াইথ ইত্যাদি নির্ধারণ করা যায় বলে এর প্রয়োগ ভিত্তিক ব্যবহার সহজ।

অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার পোস্ট সূচি

  1. অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর ব্যবহার
  2. অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর সাধারণ গঠন
  3. অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর সিম্বল
  4. আদর্শ অপারেশনাল এমপ্লিফায়ারের বৈশিষ্ট্য
  5. অপারেশনাল এমপ্লিফায়ারের কার্যপ্রণালী
    1. ওপেন লুপ এমপ্লিফায়ার
      • ভোল্টেজ কম্পারেটর
    2. ক্লোজ লুপ এমপ্লিফায়ার
      • পজিটিভ ফিডব্যাক
      • নেগেটিভ ফিডব্যাক
        • ইনভার্টিং এমপ্লিফায়ার
        • নন-ইনভার্টিং এমপ্লিফায়ার
  6. অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর (গোল্ডেন রুল) স্বর্ণ সূত্র

অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর ব্যবহার

সাধারণ ভোক্তা উপকরণ থেকে শুরু করে শিল্প ও গবেষণা ভিত্তিক বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে এর ব্যবহার রয়েছে। বহুবিধ ব্যবহারিক প্রয়োগ করতে পারায় এনালগ সার্কিট ব্লকে এর ব্যবহার জনপ্রিয়। বহুল ব্যবহৃত অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর কিছু আইসি যেমন বাজারে 10-12 টাকায় পাওয়া যায় তেমনি বিশেষ কার্য সম্পাদনের জন্য দামী আইসিও বাজারে রয়েছে।

অপারেশনাল  এমপ্লিফায়ারের সাধারণ গঠন:

বাজারে অপারেশনাল অ্যামপ্লিফায়ার ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (IC) হিসেবে পাওয়া যায়। অপারেশনাল অ্যামপ্লিফায়ারে (Op-Amp) ডিফারেন্সিয়াল ইনপুট দেয়ার জন্য দুটি ইনপুট পিন থাকে। দুই পিনের একটিকে নন-ইনভার্টিং ইনপুট এবং অন্যটিকে ইনভার্টিং ইনপুট বলা হয়। এদেরকে যথাক্রমে V+ এবং V- দ্বারা চিহ্নিত (আরও সংক্ষেপে শুধু + এবং - চিহ্ন ব্যবহার)  করা হয়। পাওয়ার সাপ্লাই এর জন্য এতে দুটি পিন  ও সাধারনত একটি আউটপুট পিন থাকে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুটি আলাদা আউটপুট থাকতে পারে। এছাড়া উৎপাদন গত ত্রুটি দূর করার জন্য অফসেট নামে আরও দুই-একটি পিন থাকতে পারে। নিচে অপারেশনাল অ্যামপ্লিফায়ারের সার্কিট সিম্বল দেখানো হলো।

অপারেশনাল অ্যামপ্লিফায়ার


আদর্শ অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর বৈশিষ্ট্য

  1. ওপেন লুপ গেইন অসীম
  2. ইনপুট ইম্পিডেন্স অসীম, ইনপুট কারেন্ট 0
  3. কোন প্রকার অফসেট ভল্টেজ এর প্রয়োজন পড়ে না
  4. আউটপুট ভোল্টেজ রেঞ্জ অসীম
  5. ব্যান্ডউইথ অসীম
  6. আউটপুট ইম্পিডেন্স 0
  7. কমন মোড রিজেকশন রেশিও অসীম
  8. পাওয়ার সাপ্লাই রিজেকশন রেশিও অসীম

অপারেশনাল  অ্যামপ্লিফায়ারের কার্যপ্রণালী

অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর ইনপুটদ্বয়ের উপর নির্ভর করে। ইনপুটদ্বয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য থাকলে এটি তা এমপ্লিফাই করে এবং বিবর্ধিত সিগনাল আউটপুটে পাওয়া যায়। 

অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর প্রকারভেদ

অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার কে নিম্নোক্ত শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়
১। ডিসক্রিট টাইপ যা সাধারণত আলাদা আলাদা ট্রানজিস্টার বা ভ্যাকুয়াম টিউব দ্বারা তৈরি।
২। আইসি টাইপ
৩। হাইব্রিড
বর্তমানে আইসি টাইপ অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর ব্যবহার সর্বাধিক।  ব্যবহারের ভিত্তিতে আইসি টাইপ অপারেশনাল অ্যামপ্লিফায়ারকে আবার বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন ডুয়েল ইনলাইন প্যাকেজ, কেজ প্যাকেজ, ফ্ল্যাট প্যাক ইত্যাদি।

ব্যবহারভিত্তিক সার্কিট

১। ওপেন লুপ এমপ্লিফায়ার

এক্ষেত্রে অপারেশনাল এমপ্লিফায়ারের ইনপুট ও আউটপুট এর মধ্যে  কোন ফিডব্যাক নেটওয়ার্ক সংযুক্ত থাকে না। তাই একে ওপেন লুপ অ্যামপ্লিফায়ার বলে। অপারেশনাল অ্যামপ্লিফায়ারের ওপেন লুপ গেইন অনেক বেশি হয়ে থাকে (সাধারণত এক লক্ষ বা তার চেয়ে বেশী)। তাই ডিফারেনশিয়াল ইনপুট দ্বয়ের মধ্যে  সামান্য ভোল্টেজের পার্থক্য আউটপুটকে স্যাচুরেটেড(উত্তেজিত করে দেয় যার ফলে আউটপুটে সর্বোচ্চ ভোল্টেজ পাওয়া যায়) করে দেয়।

ফলে ওপেন লুপ অ্যামপ্লিফায়ারে লিনিয়ার বিবর্ধন কঠিন হয়ে পড়ে। তবে বিভিন্ন কম্পারেটর সার্কিটে ওপেন লুপ অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার ব্যবহার করা যায়।

ভোল্টেজ কম্পারেটর

অপারেশনাল অ্যামপ্লিফায়ারকে ভোল্টেজ কম্পারেটর হিসেবে ব্যবহার করে নিচে একটি সার্কিট ডায়াগ্রাম দেখানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ইনপুট ভল্টেজ রেফারেন্স ভোল্টেজ সামান্য বেশি হলে আউটপুটে সাপ্লাইয়ের সমান ভোল্টেজ পাওয়া যায়। এখানে R1 এবং R2 এর মাধ্যমে তৈরি ভোল্টেজ ডিভাইডার হতে রেফারেন্স ভোল্টেজ প্রদান করা হয়েছে।


ভোল্টেজ কম্পারেটর
ভোল্টেজ কম্পারেটর

২। ক্লোজ লুপ অ্যামপ্লিফায়ার

এক্ষেত্রে অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর আউটপুট এর একটি অংশ একটি নির্দিষ্ট ফিডব্যাক নেটওয়ার্ক এর সাহায্যে ইনপুট এ প্রয়োগ করা হয়। আর এ ধরনের ব্যবস্থাপনায় অপারেশনাল এমপ্লিফায়ারের কার্যপ্রণালী সম্পূর্ণ ফিডব্যাক নেটওয়ার্ক এর উপর নির্ভর করে। তাই এ ব্যবস্থাপনায় অপ-অ্যাম্প এর ব্যবহার সর্বাধিক। 

১। পজিটিভ ফিডব্যাক

পজিটিভ ফিডব্যাক এমপ্লিফায়ারে আউটপুটের একটি ভগ্নাংশ ফিডব্যাক নেটওয়ার্কের সাহায্যে অপারেশনাল এমপ্লিফায়ারের নন-ইনভার্টিং ইনপুটে দেয়া হয়। সাধারণত পজিটিভ ফিডব্যাক  বিভিন্ন ধরনের অসিলেটর সার্কিটে প্রয়োগ করা হয়। পজিটিভ ফিডব্যাক এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে স্কিমিটিক ট্রিগার সার্কিট।  নিচের চিত্রে স্কিমিটিক ট্রিগার সার্কিট ডায়াগ্রাম দেখানো হলো। এছাড়া কিছু কিছু সার্কিট আছে যেখানে পজিটিভ এবং নেগেটিভ ফিডব্যাক একসাথে প্রয়োগ করা হয়, যেমন ট্রায়াঙ্গুলার ওয়েভ অসিলেটর, একটিভ ফিল্টার ইত্যাদি।
স্কিমিট ট্রিগার সার্কিট
স্কিমিট ট্রিগার সার্কিট(image: Collected from www.wikipedia.rog)


নেগেটিভ ফিডব্যাক

এক্ষেত্রে আউটপুট এর একটি অংশ ফিডব্যাক নেটওয়ার্ক এর সাহায্যে অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর ইনভার্টিং ইনপুটে দেয়া হয়। নেগেটিভ ফিডব্যাক অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার আবার দুই প্রকার। যথা-

(ক) নন-ইনভার্টিং অ্যামপ্লিফায়ার

এক্ষেত্রে ইনপুট ভোল্টেজ এবং আউটপুট ভোল্টেজ একই ফেজে থাকে। আর ইনপুট ভোল্টেজ নন-ইনভার্টিং ইনপুটে প্রয়োগ করা হয়। নিচে একটি নন-ইনভার্টিং  অ্যামপ্লিফায়ারের সার্কিট ডায়াগ্রাম দেখানো হলো।
নন-ইনভার্তিং অ্যামপ্লিফায়ার


আউটপুট কারেন্ট If, Rf ও R1 এর মাধ্যমে গ্রাউন্ড হয় আর ইনভার্টিং ইনপুটটি কোন কারেন্ট গ্রহণ করে না। ফলে আউটপুট ভোল্টেজ,
Vout = If(Rf + R1)..........1
অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর স্বর্ণ সূত্র হতে আমরা জানি নন-ইনভার্টিং ইনপুট ইনভার্টিং ইনপুটের সাথে ভার্চুয়ালি শর্ট থাকে ( গোল্ডেন রুল অনুযায়ী)। তাই ইনপুট ভোল্টেজ,
Vin = Vf = I1R1..........2
অতএব, Vout/Vin = If(Rf + R1)/IfR1 = (Rf + R1)/R1
=> Vout = Vin(1 + Rf/R1)..........2

(খ) ইনভার্টিং এমপ্লিফায়ার

এক্ষেত্রে অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর  নন ইনভার্টিং ইনপুট প্রান্ত গ্রাউন্ড করা হয় আর ইনভার্টিং প্রান্তে ইনপুট ভোল্টেজ প্রয়োগ করা হয়। ইনপুট ও আউটপুট ভোল্টেজ 180° আউট অফ ফেজে থাকে। নিচে ইনভার্টিং এমপ্লিফায়ার সার্কিট ডায়াগ্রাম দেখানো হলো

নন-ইনভার্তিং অ্যামপ্লিফায়ার
নন-ইনভার্তিং অ্যামপ্লিফায়ার

যেহেতু ইনভার্টিং ইনপুট নন-ইনভার্টিং ইনপুট এর সাথে ভার্চুয়ালি গ্রাউন্ড অবস্থায় আছে। তাই ইনপুট অংশে KVL প্রয়োগ করে পাই,
Vin = IinR1 ..........3
আবার আউটপুট অংশে কারেন্ট ফিডব্যাক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রাউন্ড হয় অনুরূপভাবে আউটপুটে কেভিএল প্রয়োগ করে পাই,
Vout = –IfRf ...........4
যেহেতু অপারেশনাল অ্যামপ্লিফায়ার এর ইনপুট কোনো কারেন্ট গ্রহন করে না তাই A বিন্দু থেকে KCL প্রয়োগ করে পাই,
Iin – If = 0 
=> Vin/R1 + Vout/Rf = 0 [ যেহেতু If = -Vout / Rf
=> Vin = –VfR1/Rf 
=> Vin = –VoutR1/Rf
=> Vout = –VinRf/R1 ..........5

ইন্টিগ্রতিং অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার ও ডিফারেনশিয়েট অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার আলাদা দুটি পোস্টে করা হয়েছে। পোস্ট দুটির লিংক নিচে দেয়া হল-

অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর (গোল্ডেন রুল) স্বর্ণ সূত্র

অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর কার্যপ্রণালী সহজে ব্যাখ্যা করার জন্য দুটি স্বীকার্যকে এর স্বর্ণসূত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। নিচে স্বর্ণসূত্র দুটি উল্লেখ করা হলো।
১।  যেহেতু অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার এর ইনপুট ইম্পিডেন্স অসীম তাই এর ইনপুট কোন কারেন্ট গ্রহণ করে না।
২। ইনভার্টিং এবং নন-ইনভার্টিং ইনপুটদ্বয়ের ভোল্টেজ পার্থক্য শূন্য।

কমন মোড রিজেকশন রেসিও

এটি অপারেশনাল এমপ্লিফায়ারের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট। এই বৈশিষ্টের দরুন অপারেশনাল এমপ্লিফায়ারের উভয় ইনপুটে একই ভোল্টেজ/সিগনাল দেয়া হলে এটি আউটপুটে কোনো সিগনাল দেখায় না। অর্থাৎ ইনপুটদ্বয়ে একই ভোল্টেজ থাকলে অপারেশনাল এমপ্লিফায়ার অগ্রাহ্য করে এবং আউটপুটে কোনো সিগনাল বিবর্ধন পাওয়া যায় না। ব্যবহারিক অপারেশনাল এমপ্লিফায়ারের ক্ষেত্রে এই কমন মোড রিজেকশন রেসিও অনেক বেশি থাকে।

আমাদের কোন পোস্ট আপনার ভালো লাগলেই আমরা সার্থক। আশা করি আমাদের সাথেই থাকবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Attention Please

Purpose of this blog
Learning and Sharing is the main purposeof this site. If you find anything helpful, please, share this blog to your friends to help them.

Our FB group AMIE Help Center
Our Another Site Voltage Facts