বজ্রপাতের মূল কারন হচ্ছে বাতাসে ভাসমান মেঘের মধ্যে চার্জ সঞ্চয়। বজ্রপাত এর পেছনে অনেকে ধরে থাকেন মহাজাগতিক রশ্মির একটি ভূমিকা আছে। এ বিষয়টি নিয়ে এখনও ধুম্রজালের অভাব নেই। কেউ চাইলে মৌলিক এ বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে পারেন!!!
মেঘে চার্জ সঞ্চয়ের কারণ
চার্জ সঞ্চয়ের সম্পর্কে একটি পুরাতন ধারণা এই রকম, বায়ুমন্ডলে ভাসমান ধূলিকণা মধ্যে ঘর্ষণের ফলে চার্জের পার্থক্যের তৈরি হয়। বায়ুমন্ডলে ভাসমান বস্তুর মধ্যে একটি বড় আকারের বস্তু হচ্ছে মেঘ। তাই এতে সঞ্চিত চার্জের পরিমাণ বেশি হয়।
আধুনিক ধারণা মতে, অসংখ্য ছিদ্র যুক্ত পানির ক্রিস্টাল দিয়ে তৈরি মেঘ। আমরা জানি, গরম বাতাস উপরের দিকে প্রবাহিত হয়। ফলে পৃথিবী হতে উত্তপ্ত জলীয়বাষ্প সমৃদ্ধ গরম বাতাস যখন মেঘের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন মেঘের ছিদ্রযুক্ত ক্রিস্টালের সাথে ঘর্ষণের ফলে মেঘে চার্জ সঞ্চিত হয়। ঘর্ষণের ফলে এ চার্জ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
মেঘের দুই বিপরীত পৃষ্ঠের মধ্যে যে পৃষ্ঠ পৃথিবীর দিকে মুখ করে থাকে তা নেগেটিভ চার্জে এবং এর বিপরীত পৃষ্ঠ পজেটিভ চার্জে চার্জিত হয়। ফলে একটি মেঘ মূলত একটি ইলেকট্রিক্যাল ক্যাপাসিটর বা ধারক এর মত আচরণ করে যার দুই বিপরীত প্রান্ত পজিটিভ ও নেগেটিভ প্লেট এবং মধ্যবর্তী অংশ ইনসুলেটর হিসেবে থাকে।
কৌতূহলবশত অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, নিচের দিকের অংশটা নেগেটিভ চার্জে চার্জিত হয় কেন? এর সঠিক উত্তর এখনো অজানা! তবে অনেকে মনে করেন, ঋণাত্মক চার্জগুলো অপেক্ষাকৃত ভারী থাকে তাই এগুলো নিচের দিকে অবস্থান করে। আবার পৃথিবীর আকর্ষণের কারণেও ঋণাত্মক চার্জগুলো নিচের দিকে থাকতে পারে।
ধনাত্মক ও ঋণাত্মক চার্জের কারণে ভোল্টেজ পার্থক্য সৃষ্টি হয়। বজ্রপাতের কারণ মূলত এই স্থির ভোল্টেজ পার্থক্য।
বজ্রপাতের কারণ
একটি ধারণা মতে, মেঘের সঞ্চিত স্থির বিভব যখন অনেক বেশি হয়ে যায় তখন এই স্থির বিভব মধ্যবর্তী অংশকে আয়নিত করে ফেলে। আবার কেউ কেউ মনে করেন মহাজাগতিক রশ্মির কারণে বাতাসে তৈরি হয় আয়নিক অবস্থা। ফলে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে (নিচে ব্যাখ্যা করা হয়েছে)। মেঘ হতে বজ্রপাত কোথায় পতিত হয় তার উপর নির্ভর করে একে তিন ভাগে ভাগ করা যায়...
১। মেঘের দুই বিপরীত পৃষ্ঠের সঞ্চিত চার্জের কারণে উৎপন্ন ভোল্টেজ খুব বেশি হয়ে গেলে অথবা মহাজাগতিক রশ্মির কারণে কোন দুর্বল অংশ' তৈরি হলে এর মাঝখানের বায়ুমণ্ডল পরিবাহী হিসেবে কাজ অর্থাৎ ক্যাপাসিটরের ইনসুলেটর তার ইনসুলেটিং স্ট্রেঙ্থ হারিয়ে ফেলে। ফলে বিদ্যুৎ আছড়ে পড়ে মেঘের এক পৃষ্ঠ থেকে অন্য পৃষ্ঠে। এ হলো একটি মেঘের অভ্যন্তরীণ বজ্রপাত।
২। চার্জিত একটি মেঘের নিকটে অন্য আরেকটি মেঘ চলে আসলে তখন মেঘদ্বয়ের মধ্যবর্তী বাতাস ইনসুলেটর হিসেবে আচরণ করে। এক্ষেত্রে দুইটি মেঘকে চারটি প্লেট দিয়ে তৈরি একটি ক্যাপাসিটর এর সাথে তুলনা করা যায়। মাঝখানের বাতাসে কোন লুপহোল তৈরি হলে (অত্যাধিক চার্জ অথবা মহাজাগতিক রশ্মির কারণে বাতাস যখন তার ইনসুলেটিং স্ট্রেঙ্থ হারিয়ে ফেলে) বিদ্যুৎ আছড়ে পড়ে এক মেঘ থেকে অন্য মেঘে। এটি ইন্টারক্লাউড লাইটনিং নামে পরিচিত।
৩। পৃথিবীকে ইলেকট্রনের সাগর বলা হয়। আবার পৃথিবীতে অবস্থিত বস্তু গুলোর মধ্যে এর চার্জকে শূন্য ধরা হয়।
তাই মেঘের ঋণাত্মক চার্জে চার্জিত প্লেটের সাথে তুলনা করলে পৃথিবী ক্যাপাসিটরের ধনাত্মক প্লেট হিসেবে আচরণ করে। আবার ধনাত্মক চার্জে চার্জিত প্লেটের সাথে তুলনা করলে ভূপৃষ্ঠ ঋণাত্মক প্লেট হিসেবে আচরণ করে।
মেঘের মধ্যে সঞ্চিত চার্জের দরুন উৎপন্ন ভোল্টেজ যদি খুব বেশি হয়ে যায় এবং তা পৃথিবী ও এর মধ্যবর্তী বাতাস দ্বারা প্রাপ্ত বাধাকে অতিক্রম করতে পারে অথবা বাতাসে কোন লুপহোল তৈরি হলে, সহজ করে বললে, বাতাস যখন তার বাধা দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে বিদ্যুৎ আছড়ে পড়ে পৃথিবীর বুকে।
বজ্রপাত বলতে আমরা মূলত এই ধরনের ডিসচার্জকে অর্থাৎ মেঘা ও পৃথিবীর মধ্যে যে ডিসচার্জ হয় তাকে বুঝিয়ে থাকি। কারণ এই ধরনের ডিসচার্জউ আমাদের কাছে বেশি দৃষ্টিগোচর হয়।
অনেক সময় একবার বিদ্যুৎ ক্ষরণের পর পৃথিবী থেকে ইলেকট্রন মেঘের পজেটিভ পৃষ্ঠের দিকে যায়। একে বলা হয় ব্যাক স্ট্রোক।
বজ্রপাতে শব্দ ও আলো তৈরির কারণ
আয়নিত বাতাসের মধ্য দিয়ে যখন প্রবল বেগে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তখন এতে প্রচুর তাপের উদ্ভব ঘটে। এর ফলে আমরা উজ্জ্বল রঙের আলো দেখতে পাই। বজ্রপাত মূলত কয়েক মিলিসেকেন্ডে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। অত্যধিক তাপের কারণে বাতাসের যে সরু অঞ্চল দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তার চাপ হঠাৎ করে খুব বেড়ে যায়। ফলে বাতাসের বিস্ফোরণ ঘটে এবং আমরা প্রচন্ড শব্দ শুনতে পাই।
** বাতাসে বিদ্যুৎ চমকানর কারণে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ওজোন গ্যাস তৈরি ঘটে। যার ফলে পৃথিবীর ওজন স্তর সমৃদ্ধ হয়। **
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন