এখানে ইলেকট্রনিক ক্যাপাসিটর যাকে বাংলায় ইলেকট্রনিক ধারক বলে এর বেসিক, প্রকারভেদ, ব্যবহার, সার্কিটে কাজ, একক, সূত্র, ডায়াগ্রাম ও চিত্র সহ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
ক্যাপাসিটর কি?
ক্যাপাসিটর বৈদ্যুতিক চার্জ সংরক্ষণের জন্য একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র বিশেষ। এটি একটি প্যাসিভ ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা এক জোড়া ধাতব প্লেটের মধ্যে একটি অপরিবাহি রেখে তৈরি। বহিঃস্থ কোন সার্কিট সংযোগ করার জন্য প্রতিটি প্লেটের সাথে একটি পরিবাহি সংযুক্ত করে দুটি লিড বের করা হয়।
সহজ কথায়, আমরা বলতে পারি, ক্যাপাসিটর হল এমন একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা স্থির বিদ্যুৎ শক্তি সঞ্চয় এবং প্রয়োজনে তা সরবরাহ করতে ব্যবহার হয়।
ক্যাপাসিটরের একক এবং প্রতীক
ক্যাপাসিটরের প্রতীক
ইলেকট্রনিক্সে সাধারণত তিন/চার ধরনের ক্যাপাসিটর প্রতীক ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে একটি প্রতীক পোলার(বা মেরু বিশিষ্ট) ক্যাপাসিটরের, একটি নন-পোলার ক্যাপাসিটর এবং অন্যটি পরিবর্তনশীল ক্যাপাসিটরের।
নীচের চিত্রে বাঁকা প্লেটযুক্ত প্রতীকটি একটি পোলার ক্যাপাসিটরের প্রতীক। বাঁকা প্লেটটি ক্যাপাসিটরের ক্যাথোড (–ve) নির্দেশ করে এবং অন্য প্লেটটি অ্যানোড (+ve)। কখনও কখনও +ve পাশে একটি যোগ(+) চিহ্নও থাকে। এছাড়া অন্য দুটি হচ্ছে পরিবর্তনশীল ক্যাপাসিটরের প্রতীক।
ক্যাপাসিটর পরিমাপের একক
কোনো ক্যাপাসিটর যে বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে তাই ক্যাপাসিটেন্স। ক্যাপাসিট্যান্সের SI একক ফ্যারাড (প্রতীক: F) যা ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডের নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে।
কোনো ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিট্যান্স ১ ফ্যারাড বলতে বোঝায়, ক্যাপাসিটর এর দুই বিপরীত প্রান্তের ধাতব প্লেট দুটিকে ১ কুলম্ব বৈদ্যুতিক চার্জ দিয়ে চার্জ করা হলে প্লেটদ্বয়ের মধ্যে ভোল্টেজ পার্থক্য হবে ১ ভোল্ট।
ক্যাপাসিটর এর প্রকারভেদ
বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন এবং ফাংশনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরণের ক্যাপাসিটর রয়েছে। নিচে সর্বাধিক ব্যবহৃত কয়েকটি প্রকার নিয়ে আজকের পোস্ট সাজানো হলো।
১. সিরামিক ক্যাপাসিটর
সিরামিক ক্যাপাসিটর সিরামিক এবং ধাতুর দুই বা ততোধিক পর্যায়ক্রমিক স্তর দিয়ে তৈরি নন-পোলার (অমেরু বিশিষ্ট) ক্যাপাসিটর। এখানে সিরামিক ইনসুলেটর/অস্তরক হিসাবে ও ধাতু ইলেকট্রোড হিসাবে কাজ করে।
২. ইলেক্ট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটর
ইলেক্ট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটর পোলারাইজড (মেরু বিশিষ্ট) হয়। এর মানে হল ক্যাপাসিটরের ধনাত্মক প্রান্তকে অবশ্যই ভোল্টেজ উৎসের ধনাত্মক টার্মিনালের সাথে এবং ঋণাত্মক প্রান্তকে ঋণাত্মক টার্মিনালের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। তা না করলে ক্যাপাসিটরের ক্ষতি হবে।
সাধারণত যেখানে বড় ক্যাপাসিট্যান্সের প্রয়োজন হয় সেখানে এই ধরনের ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা হয়।
৩. ফিল্ম ক্যাপাসিটর
ফিল্ম ক্যাপাসিটর বা প্লাস্টিক ফিল্ম ক্যাপাসিটর হল বেশিরভাগ ইলেকট্রনিক সার্কিটে ব্যবহৃত সবচেয়ে ক্যাপাসিটর। ফিল্ম ক্যাপাসিটরও এক ধরনের অ-মেরুক বিশিষ্ট ক্যাপাসিটর।
অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য, দীর্ঘ স্থায়িত্বকাল এই ফিল্ম ক্যাপাসিটরের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এই ক্যাপাসিটর উচ্চ তাপমাত্রায় ভাল কাজ করে।
৪. পরিবর্তনশীল ক্যাপাসিটর
এগুলি নন-পোলারাইজড (অ-মেরু বিশিষ্ট) ক্যাপাসিটর। ক্যাপাসিট্যান্স নির্ধারণের জন্য চলন্ত এবং স্থির প্লেট থাকে। সাধারণত ট্রান্সমিটার, রিসিভার বা যেসকল ক্ষেত্রে পরিবর্তনশীল ফ্রিকুয়েন্সির প্রয়োজন হয় সে সার্কিটে ব্যবহৃত হয়।
ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিট্যান্স নির্ণয় করার সূত্র?
ক্যাপাসিট্যান্সের সূত্রটি নিম্নরূপ:
যেখানে, C ক্যাপাসিট্যান্স, Q চার্জ (যার ইউনিট কুলম্ব) এবং V ভোল্টেজ (ভোল্ট)
আগেই বলেছি ক্যাপাসিট্যান্সের এককটি হল ফ্যারাড (F), যা কুলম্ব/ভোল্টের সমান। ইলেকট্রনিক কাজে ব্যবহৃত ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিট্যান্স পরিমাপের ক্ষেত্রে ফ্যারাড খুব বড় একক। তাই মাইক্রোফ্যারাড $(µF = ১০^{-৬}F)$, ন্যানোফ্যারাড $(nF = ১০^{-৯}F)$ বা পিকোফ্যারাড $(pF = ১০^{-১২}F)$ একক ব্যবহৃত হয়।
যে সকল উপাদান দিয়ে ক্যাপাসিটর তৈরি তাদের বৈশিষ্ট্য হতে ক্যাপাসিট্যান্স নির্ণয় করা যায়। ক্যাপাসিট্যান্সের সূত্র ক্যাপাসিটরে ব্যবহৃত ধাতব পাতের জ্যামিতিক আকৃতির উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে সমান্তরাল প্লেট ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিট্যান্সের সূত্রঃ $C = εA/d$
ε = পারমিটিভিটি, ডাইইলেক্ট্রিক উপাদান বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রে কেমন সঞ্চয় করে তার পরিমাপক;
সমতুল্য ক্যাপাসিট্যান্স নির্ণয়ের সূত্রঃ
একটি সমান্তরাল সার্কিটে মোট ক্যাপাসিট্যান্সের সূত্র হল:
$C_T=C_1+C_2+…+C_n$
একটি সিরিজ সার্কিটে মোট ক্যাপাসিট্যান্সের সূত্র হল:
$C_T={1/{{1/C_1}+{1/C_2}+…+{1/C_n}}}$
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন