প্রযুক্তিগত দক্ষতার ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে

ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন

ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স

ইলেকট্রেট মাইক্রোফোন বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত একটি মাইক্রোফোন। প্রত্যেক মোবাইল ফোন এবং ল্যাপটপে একটি ইলেকট্রেট মাইক্রোফোন এমবেড করা থাকে; এছাড়া অনেক স্টুডিওতেও আজকাল ইলেকট্রেট মাইক্রোফোন ব্যবহার করা হয়। এর একটি বড় সুবিধা হচ্ছে এটি অডিও ফ্রিকুয়েন্সিতে খুব ভালো কাজ করে, কারণ এর ফ্রিকোয়েন্সি পরিসীমা ১০Hz থেকে ৩০,০০০Hz । তাছাড়া এটি প্রয়োগ করা সহজ এবং বাজার মূল্যও (সাধারনত ১০ থেকে ১৫ টাকা) কম হওয়ায় বিভিন্ন খোশখেয়ালি প্রজেক্টে এর ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।

আমাদের আজকের আর্টিকেলে ইলেকট্রেট মাইক্রোফোনের অভ্যন্তরীণ গঠন নিয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া এর ব্যবহার ও প্রয়োগ কৌশলও আলোচনা করব আর্টিকেলে।

ইলেকট্রেট মাইক্রোফোন হ'ল এমন এক ধরণের ইলেকট্রোস্ট্যাটিক ক্যাপাসিটর ভিত্তিক মাইক্রোফোন, যা স্থায়ীভাবে স্থির চার্জযুক্ত ইলেকট্রোড ব্যবহার করে পোলারাইজ করার শক্তি সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা দূর করে।

ইলেক্ট্রেট মাইক্রোফোন

ইলেকট্রেট মাইক্রোফোনের গঠন

ইলেকট্রেট মাইক্রোফোনের বহিরাবরণ এলুমিনিয়ামের খোলস দ্বারা তৈরি। এই খোলসের ভেতরে বিভিন্ন সংবেদনশীল উপাদান সজ্জিত থাকে।

এই মাইক্রোফোনের উপরের দিকটা একটি ঝাঁজরা ছিদ্রযুক্ত বস্তু দিয়ে ঢাকা থাকে। এটি ধুলাবালি ও বাতাসের অতিরিক্ত ঝাপটা থেকে মাইক্রোফোনের সংবেদনশীল অংশকে রক্ষা করে। তাছাড়া এটি মাইক্রোফোনের জন্য প্রাথমিক ফিল্টার হিসেবে কাজ করে। মাইক্রোফোনের নিচের দিকে দুটি লীড থাকে যা পিসিবি-তে সংযোগের জন্য ব্যবহৃত হয়; তবে সারফেস মাউন্টিং সার্কিটের ক্ষেত্রে এ লীড বা প্রান্ত থাকেনা।

ধুলাবালির ঢাকনার নীচে অ্যালুমিনিয়ামের খোলসে ছোট একটি ছিদ্র থাকে। এই ছিদ্রের মাধ্যমে শব্দ মাইক্রোফোনে প্রবেশ করে।

ইলেকট্রেট মাইক্রোফোনের অভ্যন্তরীণ গঠন
ইলেকট্রেট মাইক্রোফোনের অভ্যন্তরীণ গঠন

চকচকে রুপালি রঙের বৃত্তাকার ইলেকট্রেট একটি ধাতব রিঙের সাহায্যে এলুমিনিয়ামের খোলসের সাথে লাগানো থাকে। এই ইলেকট্রেট এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি স্থায়ীভাবে স্থির  চার্জযুক্ত। তৈরীর সময় ইলেকট্রেট এর মধ্যে এই চার্জ এর ব্যবস্থা করা হয়। এটাই প্রচলিত কনডেনসার মাইক্রোফোনের সাথে ইলেকট্রেট মাইক্রোফোনের মূল পার্থক্য।

ইলেকট্রেট তৈরির সময় একটি শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের মধ্যে রেখে কুরি তাপমাত্রার উপরে উত্তপ্ত করা হয়। এরপর বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের পরিবর্তন না করে এটিকে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ঠান্ডা করা হয়। তারপর ইলেকট্রিক ফিল্ড সরিয়ে নিলেও চার্জ স্থায়ীভাবে বস্তুটির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যায়। এ আবদ্ধ চার্জ ইলেকট্রেটের মধ্যে প্রায় শত বছর আবদ্ধ থাকতে পারে।

ইলেকট্রেট মাইক্রোফোনে ব্যবহৃত ক্যাপাসিটরের দুটি ইলেকট্রোডের মধ্যে একটি ইলেকট্রেট এবং অন্যটি ব্যাকপ্লেট নামে পরিচিত। এই ব্যাকপ্লেট ধাতুর তৈরি যাতে বাতাস চলাচলের জন্য ছোট ছোট কয়েকটি ছিদ্র থাকে। ইলেকট্রেট এবং ব্যাকপ্লেটের মধ্যে যথেষ্ট ফাঁকা জায়গা রাখার জন্য  পাতলা একটি প্লাস্টিক রিং (চিত্রে লাল রঙের) ব্যবহার করা হয়। প্লাস্টিকের রিং সহ ইলেকট্রেট(electret)-র প্রশস্ততা ০.০২৫৪ মিলিমিটার বা তার চেয়ে কম হয়ে থাকে।

ব্যাকপ্লেট এলুমিনিয়ামের খোলস হতে বৈদ্যুতিক ভাবে আলাদা রাখার জন্য একটি প্লাস্টিকের বাক্স ব্যবহার করা হয়। মাইক্রোফোনের ক্যাপাসিটিভ ট্রান্সডিউসার হতে উৎপন্ন ভোল্টেজের মান খুবই কম। তাই প্লাস্টিকের বাক্সের মধ্যে একটি ছোট অ্যামপ্লিফায়ার থাকে। এ অ্যামপ্লিফায়ারটি মূলত একটি জেফেট যার গেট প্রান্ত ব্যাকপ্লেটের সাথে এবং সোর্স প্রান্ত এলুমিনিয়ামের খোলসের মাধ্যমে ইলেকট্রেটের সাথে সংযুক্ত থাকে। মাইক্রোফোনে যে দুইটি লীড  বা প্রান্ত থাকে তা মূলত JFE-র সোর্স এবং ড্রেন প্রান্ত। সোর্স প্রান্ত অ্যালুমিনিয়ামের খোলসের সাথে যুক্ত থাকে তা চিত্রে দেখানো হয়েছে। অ্যামপ্লিফায়ারকে কার্যকর করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহের প্রয়োজন হয়।

ইলেকট্রেট মাইক্রোফোনের কর্ম প্রক্রিয়া

ইলেকট্রেট মাইক্রোফোনের ডায়াফ্রাম হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ শব্দ বাতাসের মাধ্যমে এই বস্তুটিকে আন্দোলিত করে। ফলে শব্দ তরঙ্গের সাথে তাল মিলিয়ে ডায়াফ্রাম কাঁপতে থাকে  এবং সমানুপাতে মাইক্রোফোনের ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিট্যান্স পরিবর্তিত হয়। আমরা জানি–

 Q = CV
বা, V = Q/C ..........১
যেখানে,
V = ইলেকট্রোড দ্বয়ের মধ্যবর্তী ভোল্টেজ
Q = একটি প্লেটের সঞ্চিত চার্জের পরিমাণ
C = ক্যাপাসিটরের ক্যাপাসিট্যান্স

আবার,
C = εA/d............২
যেখানে,
ε = মাধ্যমের ভেদনযোগ্যতা
A = ক্যাপাসিটর ইলেকট্রোডের ক্ষেত্রফল
d = ইলেকট্রোড দ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব

১ ও ২ নং সমীকরণের মান সমন্বয় করে পাই
 V = Q/(εA/d)
বা,  V = d×Q/(εA)
বা, V∝d [এক্ষেত্রে Q/(εA) = ধ্রুবক]

এখানে,
Q ধ্রুবক কারণ স্থায়ীভাবে নির্দিষ্ট চার্জিত বস্তু ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার হয়।

ε ক্যাপাসিটরের ডাই-ইলেকট্রিকের উপর নির্ভরশীল একটি ধ্রুবক এবং

ইলেকট্রোডের ক্ষেত্রফল, A অপরিবর্তনীয়

উপরের সমীকরণ হতে দেখা যায়, শব্দ কম্পনের দরুন ইলেকট্রোড দ্বয়ের মধ্যবর্তী দূরত্ব হ্রাস-বৃদ্ধি পায়, ফলে যে ভোল্টেজের পরিবর্তন হয় তাই মূলত শব্দের অনুরূপ ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল। এই সিগন্যালকে ছোট একটি অ্যামপ্লিফায়ারের সাহায্যে অ্যামপ্লিফাই করে আউটপুট প্রদান করা হয়।


উপরের চিত্র হতে দেখা যায়, চার্জিত ইলেকট্রেট উপাদান এবং ব্যাকপ্লেটটি খুব কাছাকাছি দূরত্বে এবং একে অপরের মুখোমুখি থাকে। তাই একটি ক্যাপাসিটার তৈরি করে। পুরানো দিনগুলিতে ক্যাপাসিটরকে কনডেন্সার বলা হত, তাই এর নাম কনডেনসার মাইক্রোফোন। ইলেকট্রেট মাইক্রোফোনের স্কিম্যাটিক সার্কিট নীচে দেখানো হয়েছে।


লেখাটা অনেক বড় হয়ে যাওয়ার পরবর্তী পোস্টে ইলেকট্রেট মাইক্রোফোন ব্যবহার ও প্রয়োগ সার্কিট নিয়ে আলোচনা  করা হয়েছে।

তথ্য সংকলন:
The Microphone Book by John Eargle (2nd Edition)
Inventors: Gerhard M Sessler and James E West Patent copy
openmusiclabs.com (ছবি সংগ্রহ)
electronicspoint.com
wikipedia.org

ভাল লাগলে কমেন্ট এবং শেয়ার করতে ভুলবেন না। কারণ আপনাদের কমেন্ট এবং শেয়ার আমাদের পরবর্তী পোষ্টের অনুপ্রেরণা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Attention Please

Purpose of this blog
Learning and Sharing is the main purposeof this site. If you find anything helpful, please, share this blog to your friends to help them.

Our FB group AMIE Help Center
Our Another Site Voltage Facts