অতি গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল মোটরের সুরক্ষার জন্য সাশ্রয়ী একটি আরক্ষা ডিভাইস হচ্ছে ওভারলোড রিলে। এই ডিভাইস ওভারলোড বা অতিরিক্ত তাপমাত্রা জনিত অথবা ফেজ ত্রুটির ক্ষেত্রে মোটরের জন্য নির্ভরযোগ্য সুরক্ষা প্রদান করে। ওভারলোড রিলে বৈদ্যুতিক মোটরকে সুরক্ষা প্রদান করে আর সম্পূর্ন সার্কিটের সুরক্ষা জন্য সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা আবশ্যক। সার্কিট ব্রেকার এবং ওভারলোড রিলে ছাড়াও মোটরকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি ম্যাগনেটিক কন্টাক্টর ব্যবহার করা হয়। নিচের সহজ চিত্রের মাধ্যমে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলো।
ওভারলোড রিলে বনাম সার্কিট ব্রেকার
ওভারলোড রিলে অনেকটা সার্কিট ব্রেকার বা ফিউজের মত কাজ করে। তবে ওভারলোড রিলে শুধুমাত্র মোটরের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে সার্কিট ব্রেকার বা ফিউজ সম্পূর্ণ সার্কিটের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়। বৈদ্যুতিক মোটর নিরাপদে পরিচালনা করতে ওভারলোড রিলে এবং সার্কিট ব্রেকার বা ফিউজ উভয়ই থাকতে হয়। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায় যে, সার্কিটে খুব বেশি কারেন্ট প্রবাহ সনাক্ত করতে সার্কিট ব্রেকার বা ফিউজ ডিজাইন করা হয়। অন্যদিকে ওভারলোড রিলে কোনও মোটর অতিরিক্ত গরম হচ্ছে কিনা অর্থাৎ অতিরিক্ত লোডে আছে কিনা তা সনাক্ত করার জন্য ডিজাইন করা হয় এবং মোটর খুব বেশি গরম হয়ে গেলে সার্কিটটি খুলে মোটরে পাওয়ার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। ওভারলোড রিলে সার্কিট ব্রেকার ট্রিপিং ছাড়াই ট্রিপ করতে পারে। এজন্য একটির পরিবর্তে অন্যটি অথবা যে কোন একটি ব্যবহার করলে সার্কিট সম্পূর্ণ সুরক্ষিত হবে না।
ওভারলোড রিলের প্রকারভেদ
ওভারলোড হওয়ার কত সময় পর সাড়া প্রদান করবে তার ওপর ভিত্তি করে ওভারলোড রিলে কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। এই ভাগগুলো হলো (i) ক্লাস-১০, (ii) ক্লাস -২০ এবং (iii) ক্লাস-৩০। শ্রেণীর নম্বরগুলো প্রতিক্রিয়া প্রদানের সময় (সেকেন্ডে) নির্দেশ করে।সাধারণত এটা ওভারলোড রিলের গায়ে স্পেসিফিকেশনে লেখা থাকে আর না লেখা থাকলে ক্লাস-২০ ধরে নিতে হয়।
কাজের প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে ওভারলোড রিলেকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়
১। থার্মাল ওভারলোড রিলে২। ম্যাগনেটিক ওভারলোড রিলে
১। থার্মাল ওভারলোড রিলে
থার্মাল ওভারলোড রিলে বৈদ্যুতিক মোটরের সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত এমন একটি আরক্ষা ডিভাইস যা কোনো মোটরে নির্দিষ্ট সময় যাবৎ অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহ ঘটলে পাওয়ার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এখানে মূলত থার্মোকাপল ব্যবহার করা হয় যা অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহের দরুন গরম হয়ে রিলেকে স্যুইচ অফ করে।
২। ম্যাগনেটিক ওভারলোড রিলে
ম্যাগনেটিক ওভারলোড রিলে মোটরে প্রবাহিত কারেন্ট দ্বারা উত্পন্ন চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের শক্তি সনাক্ত করে পরিচালিত হয়। এই রিলে মাত্রাতিরিক্ত কারেন্ট নির্দিষ্ট সময় যাবত প্রবাহিত হলে উৎপন্ন ফ্লাক্স একটি কোর টেনে ওভারলোড রিলে ট্রিপ করে। ম্যাগনেটিক ওভারলোড রিলে এবং থার্মাল ওভারলোড রিলের মধ্যে মূল পার্থক্য হল ম্যাগনেটিক রিলে পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল না হয়ে প্রবাহিত কারেন্টের উপর নির্ভরশীল।
ওভারলোড রিলের ব্যবহার
নিচে ওভারলোড রিলের ব্যবহার উল্লেখ করা হলো।
- মোটরকে ওভার কারেন্ট হতে সুরক্ষার জন্য ওভারলোড রিলে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
- অত্যাধিক তাপ হতে মোটরকে সুরক্ষার জন্য ওভারলোড রিলে ব্যবহার হয়।
- এছাড়া কিছু ফল যেমন ফেজ-ফেজ , ফেজ -গ্রাউন্ড ইত্যাদি ত্রুটির ক্ষেত্রে ওভারলোড রিলে মোটরকে সুরক্ষা প্রদান করে।
ওভারলোড রিলে সংযোগ ডায়াগ্রাম
ওভারলোড রিলের সংযোগ পদ্ধতি নিচের চিত্রের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে যা এই আর্টিকেল এর প্রথম চিত্রে ব্লক ডায়াগ্রামের মাধ্যমে দেখানো হয়েছিল।বাজারে বিভিন্ন ধরণের ওভারলোড রিলে পাওয়া যায়, এর মধ্যে সবচেয়ে ব্যবহৃত রিলে হ'ল "বাই-মেটালিক (থার্মোকাপল) থার্মাল ওভারলোড রিলে"। এই রিলে তৈরিতে প্রত্যেক ফেজের কারেন্ট পরিবহনের জন্য দুটি ভিন্ন ভিন্ন ধাতব পাতের তৈরি একটি পরিবাহী ব্যবহার করা হয়। অতিরিক্ত কারেন্ট প্রবাহের ফলে যে তাপ উৎপন্ন হয় তাতে ধাতব পাতদ্বয়ের আলাদা আলাদা প্রসারণ ঘটে। ফলে কারেন্ট পরিবাহীটি কোন একদিকে বেঁকে যায়। কোন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় যখন ধাতব পাতটি যথেষ্ট পরিমাণে বেঁকে যায় তখন ওভারলোড রিলে ট্রিপ করে।
ওভারলোড রিলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো কোনো কারণে যদি ওভারলোড রিলে ট্রিপ করে তাহলে সাথে সাথে মোটরকে আর রিস্টার্ট করা যায় না। এক্ষেত্রে ওভারলোড রিলেতে ব্যবহৃত থার্মোকাপল ঠাণ্ডা না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। যদি কেউ সুইচের মাধ্যমে মোটর চালু করতে স্টার্ট স্যুইচ চাপতে থাকে তাহলেও মোটরটি স্যুইচ অন হবে না।
নির্দেশিকা: ওভারলোড রিলের হিটার প্রতিস্থাপন/পরিবর্তন করার সময়, সর্বদা পুরো সেটটি প্রতিস্থাপন করা উচিত। কেননা বাকি দুটি হিটারও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে বারবার পরিবর্তন করার প্রতিস্থাপন খরচ বৃদ্ধি পাবে।আমাদের পোষ্ট ভাল লাগলে কমেন্টে জানাবেন। যে কোন প্রকার ভুল ত্রুটি জানাতে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। আমাদের সকলের প্রচেষ্টা একটি সুন্দর ও সুষ্ঠ প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে।
ওভারলোড রিলের সাইজ নির্ধারণ সম্পর্কে জানতে নিচের পোস্টটি দেখার অনুরোধ রইলো:
সর্বশেষ আপডেট: ১১/০৯/২০২১
অসাধারণ
উত্তরমুছুনকেউ কমেন্ট করলে ভালো লাগে, মনে হয় কেউ উপকৃত হয়েছে। ধন্যবাদ।
মুছুনSingle phase ১hp মটরের জন্য কত আম্প্যিয়ার থার্মাল ওভার লোড রিলে ব্যবহার করতে হবে।
উত্তরমুছুনথার্মাল ওভারলোড রিলে সাইজ = $ ফেজ \ কারেন্ট × 120%$, মোটরটি 220 ভোল্ট 1 hp হলে 4 এম্পিয়ার হবে।
মুছুনঅভারলোড ঘন ঘন নষ্ট হয়ার কারন কি? একটু বললে উপকৃত হব। ধন্যবাদ।
উত্তরমুছুনমোটর দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে এর ইন্সুলেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে উপলোড কারেন্ট আগের চেয়ে আনুমানিক 10 থেকে 20 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ওভারলোড রিলে সবসময়ই কাজ করতে থাকে অর্থাৎ গরম হতে থাকে। ওভারলোড রিলের ক্যাপাসিটি সামান্য বাড়িয়ে দিতে পারেন। অন্যভাবে, মোটর এর বিভিন্ন টেস্টের মাধ্যমে ওভারলোড কারেন্ট নির্ধারণ করে নির্দিষ্ট মানের ওভারলোড রিলে ব্যবহার করতে হবে। ( সম্ভাব্য সমাধান )
মুছুনভালো
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুন৫৫কিঃওয়াট থ্রি ফেজ কত অ্যামপিয়ারের ওভার লোড লাগাতে হবে
উত্তরমুছুনএই পোস্টটি দেখুন আশাকরি উত্তর পেয়ে যাবেন। থার্মাল ওভারলোড রিলের সাইজ নির্নয়
মুছুনথ্রী ফেজ মটরের জন্য কিভাবে ওভারলোড রিলে নিবার্চন করবো????অভিজ্ঞদের মতামত আশা করতেছি।
উত্তরমুছুনপ্রথমে লাইন কারেন্ট বের করতে হবে। তারপর লাইন কারেন্টের ১২০% বা ১.২০ গুন ওভারলোড রিলে সংযুক্ত করতে হবে।
মুছুন