প্রযুক্তিগত দক্ষতার ব্যবহার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে

ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন

ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্স

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ বিলের বর্তমান  ট্যারিফ অনুযায়ী বিদ্যুৎ বিল কম রাখার উপায় দুটি, প্রথমত বিদ্যুতের ব্যবহার সীমিত রাখা আর দ্বিতীয়ত বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবহার করা। 

বিদ্যুতের ব্যবহার সীমিত রাখার উপায়

একটু সচেতনতা ও কিছু কৌশল অবলম্বন করলে বিদ্যুৎ বিল অনেকাংশে নিয়ন্ত্রনে রাখা যায়। এসকল কৌশল বা উপায় আমাদের সকলেরই জানা থাকা উচিত। আসুন, তাহলে জেনে নিই বিদ্যুৎ বিল সীমিত রাখার উপায়।

বাসাবাড়ি, অফিস-আদালদ, ফ্যাক্টরি, কারখানার ক্ষেত্রে লক্ষণীয়:

  1. অভ্যন্তরীণ সংযোগ বা ইলেকট্রিক্যাল লাইন টানার জন্য খাঁটি তামার তার ব্যবহার করা জরুরি। কারণ তামার তারের রেজিস্ট্যান্স সবচেয়ে কম হওয়ায় লাইন লস কম ঘটে। ফলে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।
  2. ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত ইত্যাদি আলোকিত রাখার জন্য এনার্জি সেভিংবাল্ব ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে এল ই ডি ব্যবহার অপেক্ষাকৃত বেশি লাভজনক।
  3. অব্যবহৃত অবস্থায় টিভি, মোবাইল চার্জার অথবা অন্য কোনো ডিভাইস বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রাখাই ভালো। আবার ব্যবহার না হলে মাল্টিপ্লাগও পাওয়ার লাইন হতে বিচ্ছিন্ন রাখা উচিত। এতে যেমন ঐ ডিভাইসগুলো ঝুঁকিমুক্ত থাকে তেমনি বিদ্যুৎ বিলও কম আসে।
  4. এসি ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথাসম্ভব বারবার অন-অফ না করাই ভালো। তবে এসির তাপমাত্রা ২২° এর উপরে রেখে চালাতে পারলে তুলনামূলক বিদ্যুৎ বিল অনেক কম আসবে। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এসির তাপমাত্রা ২৩° এর নিচে চালালে শক্তি রূপান্তরের তুলনায় বিদ্যুৎ খরচ প্রায় দ্বিগুণ ঘটে।
  5. ফ্রিজ যদি ফ্রর্স্ট হয় তাহলে লক্ষ্য রাখতে হবে এতে যাতে বেশি বরফ জমা না পড়ে। বরফ তাপ অপরিবাহী হওয়ায় এতে শক্তির অপচয় বেড়ে যায়। ফ্রিজের ভেতরের মালামাল যদি একটু সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা যায় তাহলে শাকসবজি বের করার সময় ফ্রিজের দরজা বেশিক্ষণ খোলা রাখার প্রয়োজন হবে না। এতেও শক্তির অপচয় হ্রাস পাবে।
  6. রাইস কুকার বা অন্য কোনো ইলেকট্রিক চুলা ব্যবহারের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে পাত্রের নিচে কোনো ময়লা না থাকে। ময়লা তাপ প্রতিরোধী, তাই শক্তির অপচয় ঘটে এবং বিদ্যুৎ খরচ বাড়ে।
  7. রাইস কুকার ব্যবহারের ক্ষেত্রে পানির মাত্রা যথা উপযুক্ত হওয়া উচিত। পানি বেশি হলে বেশি শক্তির প্রয়োজন হবে তা বাষ্প করতে।
  8. ইলেকট্রিক ইস্ত্রির ক্ষেত্রে থার্মকাপল যুক্ত ইস্ত্রি ব্যবহার করা উচিত। এতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে অতিরিক্ত তাপ হতে যেমন কাপড় রক্ষা পায় তেমনি ইলেকট্রিক বিলও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  9. রান্নাঘর বা টয়লেটে দুর্গন্ধ বা ধোয়া দূর করার জন্য এডজাস্ট ফ্যান ব্যবহার করলে তা সময় মত বন্ধ করতে হবে। তা না হলে ইলেকট্রিক বিল বেশি আসার সম্ভাবনা থেকে যায়।
  10. ফ্যানের গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য এর সাথে কোন রেগুলেটর ব্যবহার করলে তা যেন ইলেকট্রনিক রেগুলেটর হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্য রেগুলেটরে ফ্যানের গতি কম বা বেশির উপর শক্তির অপচয় নির্ভর করে না; সবসময় একই থাকে। কিন্তু ইলেকট্রনিক রেগুলেটরের ক্ষেত্রে গতি কম থাকলে পাওয়ার খরচও কম ঘটে।
  11. কম্পিউটার সারাক্ষণ অনেক পাওয়ার শোষণ করতে থাকে তাই প্রয়োজন না হলে কম্পিউটার বন্ধ রাখাই শ্রেয়। অন্তত স্লিপ মুডে রাখলে বিদ্যুৎ বিল কিছুটা কম আসবে।
  12. যে সকল ডিভাইস নিয়মিত চার্জ করার প্রয়োজন পড়ে, চার্জ হওয়ার সাথে সাথে লাইন হতে বিচ্ছিন্ন রাখাই ভালো। ইলেকট্রনিক প্রটেকশন থাকার কারণে চার্জিং ডিভাইসটি হয়তো নষ্ট হবে না তবে ওভার চার্জিং এর দরুন শক্তির অপচয় ঘটবে।
  13. ফ্যানের পাতায় ময়লা জমলে তা ভারী হয়ে যায়। ফলে ফ্যান সঠিক গতিতে ঘুরতে চাইলে বাতাসের ঘর্ষণের কারণে শক্তির অপচয় ঘটে ও ইলেকট্রিক বিল বেশি আসার সম্ভাবনা থাকে।
  14. পানির পাম্প চালানোর সময় প্রায়ই ওভার ফ্লোটিং এর কারণে পানি ও শক্তির অপচয় ঘটে। এক্ষেত্রে অটোমেটিক ওয়াটার পাম্প কন্ট্রোলার ব্যবহার করলে পানির অপচয় রোধ হবে এবং বিদ্যুৎ বিল নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
বড় অফিস, ফ্যাক্টরি বা কারখানা ক্ষেত্রে লক্ষণীয়:
  1. বড় অফিস, কারখানা বা ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে পাওয়ার ফ্যাক্টর কারেকশনের ব্যবস্থা থাকা উচিত। পাওয়ার ফ্যাক্টর সংশোধনের জন্য প্রত্যেক ইন্ডাকটিভ লোডের সাথে এবং সেন্ট্রাল উভয় প্রকারের সংশোধনের সমন্বয় করা উচিত। এতে লাইন লস অনেক কমে যাবে এবং বিদ্যুৎ বিল কম আসবে।
  2. বিভিন্ন মোটর, ফ্যান ইত্যাদি শব্দ ছাড়া চলে কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শব্দ হওয়ার মানে ঘর্ষণের মাধ্যমে শক্তির অপচয়। প্রয়োজনীয় সার্ভিসিং (বিয়ারিং পরিবর্তন, গ্রিজ ব্যবহার, কার্বন ব্রাশ পরিবর্তন ইত্যাদি) এর মাধ্যমে এই অপচয় রোধ করা যায়। 
  3. গরম এবং ঠান্ডা করার কাজের জন্য ইন্ডাস্ট্রিতে প্রচুর শক্তি খরচ হয়। হিটিং এবং কুলিং এর কাজে স্ট্যান্ডার্ড ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা উচিত। 

বিকল্প শক্তির ব্যবহার

আলো বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা রেখে ঘরবাড়ি বা অফিস আদালত তৈরি করা ভালো। ফলে অন্তত দিনের বেলায় আলোর উৎস হিসেবে ইলেকট্রিক বাতি ব্যবহারের প্রয়োজন পড়বে না। তাছাড়া ঘর যদি উত্তর দক্ষিণ মুখী হয় তাহলে এমনিতেই বাতাসের ব্যবস্থা থাকবে ও বিদ্যুতের ব্যবহার কমবে।

বিদ্যুৎ বিল কমানোর জন্য বিকল্প শক্তির উৎস হিসেবে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যাটারি সহ  (অনগ্রিড সোলার সিস্টেম), ব্যাটারি ছাড়া (অফগ্রিড সোলার সিস্টেম) অথবা উভয়ের সমন্বয়ে তৈরী (হাইব্রিড সোলার সিস্টেম) সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে ইলেকট্রিক বিল অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এটি অন্য যেকোনো পদ্ধতির বিদ্যুৎ ব্যবহারের চেয়ে তুলনামূলক সাশ্রয়ী। এছাড়া বায়ুকল বা উইন্ড মিল অন্যতম সাশ্রয়ী বিকল্প শক্তির উৎস।

সৌর বিদ্যুৎ স্থাপনের হিসাব নিকাশ দেখতে নিচের পোস্ট দুটি দেখতে পারেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Attention Please

Purpose of this blog
Learning and Sharing is the main purposeof this site. If you find anything helpful, please, share this blog to your friends to help them.

Our FB group AMIE Help Center
Our Another Site Voltage Facts