যে কখগ ইলেকট্রিক্যাল লাইসেন্স ইলেকট্রিশিয়ানদের দেয়া হয়ে থাকে তা কখগ বৈদ্যুতিক কারিগরি পারমিট নামে পরিচিত। পূর্বের পোস্টে কখগ ইলেকট্রিক্যাল লাইসেন্স সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছি। তাই এ পোস্টে শুধু বৈদ্যুতিক কারিগরি পারমিট নিয়ে লিখবো।
পরীক্ষার ফিস: বিষয় ও শ্রেণি মোতাবেক নিম্নবর্ণিত হারে সরকারি ট্রেজারীতে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকে অবশ্যই নির্ধারিত খাতে চালানের মাধ্যমে জমা করতে হবে। শ্রেণী অনুযায়ী পরীক্ষার ফিস ও পারমিট নবায়ন ফিস নিচে ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করা হলো।
১. ইলেট্রিক্যাল হাউজ ওয়্যারিং (বিল্ডিং এর সিঙ্গেল লাইন ডায়াগ্রাম, এনার্জি মিটার, মেইন সুইচ, সুইচবোড, সিলিং ফ্যান, টিউব লাইট, আইপিএস, ইউপিএস, পানির পাম্প ইত্যাদি )।
Electrical ABC license for Electritian |
বৈদ্যুতিক কারিগরি পারমিট অর্জনের সুবিধা
কোন গ্রুপ অফ কোম্পানি বা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ইলেকট্রিশিয়ান নিয়োগের ক্ষেত্রে এই লাইসেন্স বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। অনেক ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ইলেকট্রিশিয়ানের পরিবর্তে বৈদ্যুতিক কারিগরি পারমিট প্রাপ্ত ইলেকট্রিশিয়ানকে বেশি গুরুত্ব দয়া হয়। এছাড়া বিদ্যুৎ বিভাগের শর্ত অনুযায়ী কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্টানের মোট ইলেকট্রিশিয়ানদের মধ্যে ৫০% বৈদ্যুতিক কারিগরি পারমিট প্রাপ্ত ইলেকট্রিশিয়ান হতে হবে।কোথা হতে কারিগরি পারমিট দেয়া হয়
কখগ বৈদ্যুতিক কারিগরি পারমিট অর্জনের জন্য একজন ইলেকট্রিশিয়ানকে মৌখিক ও ব্যবহারিক পরিক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে হয়। এ পরীক্ষা নেয়া হয় বৈদ্যুতিক উপদেষ্ঠা ও প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের কার্যালয়ে। বছরে ০২ বার (সাধারণ ফেব্রুয়ারি/মার্চ এবং সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাসে) বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আগ্রহী ইলেকট্রিশিয়ানদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহবান করা হয়।
প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা
বৈদ্যুতিক কারিগরি পারমিট ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য কোনো ইলেকট্রিশিয়ানকে নিম্নবার্ণিত অভিজ্ঞতার সনদপত্র (যা প্রযোজ্য) দাখিল করতে হবে।- বিদ্যুৎ লাইসেন্সিং বোর্ড থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত ঠিকাদারের অধীনে আবেদনকৃত প্রতি শ্রেণির জন্য নির্ধারিত কাজের উপর কমপক্ষে ২ (দুই) বছরের অভিজ্ঞতা/প্রশিক্ষণ৷ অথবা,
- বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনস্থ পলিটেকনিক ইনষ্টিটিউট/টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ (প্রাক্তন ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনষ্টিটিউট)/জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অধীনস্থ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র/যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরাধীন কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে ইলেকট্রিক্যাল ট্রেড এর উপর প্রশিক্ষণ। অথবা,
- কোন স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান হতে আবেদনকৃত প্রতি শ্রেণির জন্য নির্ধারিত কাজের উপর কমপক্ষে ২ (দুই) বছরের অভিজ্ঞতা/প্রশিক্ষণ।
প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত যোগ্যতা
কখগ বৈদ্যুতিক কারিগরি পারমিট অর্জনের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা ছাড়া তেমন কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা উল্লেখ করেনি। তবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সূত্র ধরে এতটুকু বলতে পারি, নূন্যতম ৮ম শ্রেণী পাস হওয়া উচিত আর এসএসসি পাস হলে ভালো হয়।কারিগরি পারমিট আবেদন প্রক্রিয়া
পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের জন্য প্রত্যেক পরীক্ষার্থীকে নির্ধারিত ফর্মে আবেদন করতে হয়। এ আবেদন ফর্ম পাওয়া যাবে বৈদ্যুতিক উপদেষ্ঠা ও প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের ওয়েবসাইটে। আবেদনের পর এসএমএস এর মাধ্যমে পরীক্ষার সময় ও তারিখ বলে দেয়া হবে। উল্লেখ্য এই এসএমএস ই পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র হিসেবে গণ্য হবে।
প্রতিদিনের পরীক্ষার ফলাফল প্রতিষ্টানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। নিচে বৈদ্যুতিক কারিগরি পারমিট আবেদন ফর্মের সরাসরি ডাউনলোড লিংক ও বৈদ্যুতিক উপদেষ্ঠা ও প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের ওয়েবসাইটের লিংক দেয়া হলো।
ওয়েবসাইট: https://eacei.portal.gov.bd/
ফর্ম ডাউনলোড লিংক: বৈদ্যুতিক কারিগরি পারমিট আবেদন ফর্ম
প্রতিদিনের পরীক্ষার ফলাফল প্রতিষ্টানের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। নিচে বৈদ্যুতিক কারিগরি পারমিট আবেদন ফর্মের সরাসরি ডাউনলোড লিংক ও বৈদ্যুতিক উপদেষ্ঠা ও প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শকের ওয়েবসাইটের লিংক দেয়া হলো।
ওয়েবসাইট: https://eacei.portal.gov.bd/
ফর্ম ডাউনলোড লিংক: বৈদ্যুতিক কারিগরি পারমিট আবেদন ফর্ম
আবেদন প্রাপক: সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগ, ২৪ তোপখানা রোড, জ্যোৎসনা কমপ্লেক্স, ঢাকা-১০০০
সেন্টার ফী ও পরীক্ষার ফী
সেন্টার ফিস: কারিগরি পারমিট পরীক্ষার প্রতি শ্রেণীর জন্য ২০০/-(দুইশত) টাকা হারে আবেদনকালীন সময়ে অত্র বোর্ডে নগদ প্রদান করতে হবে।পরীক্ষার ফিস: বিষয় ও শ্রেণি মোতাবেক নিম্নবর্ণিত হারে সরকারি ট্রেজারীতে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকে অবশ্যই নির্ধারিত খাতে চালানের মাধ্যমে জমা করতে হবে। শ্রেণী অনুযায়ী পরীক্ষার ফিস ও পারমিট নবায়ন ফিস নিচে ছকের মাধ্যমে উল্লেখ করা হলো।
শ্রেণি | পরীক্ষার ফিস(টাকা) | পারমিট নবায়ন ফিস(টাকা) |
গ | ৯০.০০ | ৩০.০০ |
গওখ | ২৪০.০০ | ৯০.০০ |
গ, খ ওক | ৫৪০.০০ | ১৮০.০০ |
নিম্নবর্ণিত কাগজপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে) অবশ্যই আবেদন ফর্মের সাথে সংযুক্ত করে বিদ্যুৎ বোর্ডের সচিব বরাবর প্রেরণ/দাখিল করতে হবে।
- চালানের মূল কপি।
- শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্রের সত্যায়িত কপি।
- কোন স্বনামধন্য/খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানে বৈদ্যুতিক কারিগর হিসাবে অভিজ্ঞতার সনদপত্র।
- চারিত্রিক প্রশংসার সনদপত্র।
- জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি)/জন্ম নিবন্ধন পত্রের সত্যায়িত কপি।
- দরখাস্তকারীর স্থাক্ষর অথবা টিপ সহিযুক্ত এবং ম্যাজিষ্ট্রেট, প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা পৌর কমিশনার কর্তৃক সত্যায়িত সদ্য গৃহীত ৪ (চার) কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
বৈদ্যুতিক কারিগরি পারমিট পরীক্ষার সিলেবাস ও সাজেশন
নির্দিষ্ট ভোল্টেজ রেঞ্জ এর মধ্যে পড়ে এমন সব কাজই ঐ শ্রেণীর সিলেবাস। একটু সংক্ষিপ্ত আকারে সাজেশন ও সিলেবাস তুলে ধরলাম।
গ শ্রেণীর সিলেবাস ও সাজেশন
যেসকল যন্ত্রপাতি ২২০ ভোল্টেজে চলে/কাজ করে এমন সব বিষয়ের হতে প্রশ্ন করা হয়। এক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া যেতে পারে।১. ইলেট্রিক্যাল হাউজ ওয়্যারিং (বিল্ডিং এর সিঙ্গেল লাইন ডায়াগ্রাম, এনার্জি মিটার, মেইন সুইচ, সুইচবোড, সিলিং ফ্যান, টিউব লাইট, আইপিএস, ইউপিএস, পানির পাম্প ইত্যাদি )।
২. বিভিন্ন প্রকার ক্যবল, সার্কিট ব্রেকার, ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ড ও সব-ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ড।
৩. মাল্টিমিটার/অ্যভোমিটার, মেগার, আর্থ টেস্টার ইত্যাদি
৪. ওয়্যারিং করার কাজে ব্যবহত হ্যান্ড টুলস ও সেফটি টুলস।
৫. সিরিজ, প্যারালাল সার্কিট, ফেজ, নিউট্রাল, আর্থিং।
খ শ্রেণীর সিলেবাস ও সাজেশন
এই শ্রেণীর বৈদ্যুতিক কারিগরি পারমিট পরীক্ষায় যেসকল যন্ত্রপাতি ২২০-৪০০ ভোল্টেজে চলে/কাজ করে এমন সব বিষয়ের হতে প্রশ্ন করা হয়। এক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া যেতে পারে।
১. ক্যবল, ফিউজ, সার্কিট ব্রেকার, রিলে ও ম্যাগনেটিক কন্টাকটর।
২. সাব-ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ড, ডিস্ট্রিবিউশন বোর্ড, এলটি প্যানেল, পিএফ আই প্যানেল।
৩. সাব-স্টেশন (সিঙ্গেল লাইন ডায়াগ্রাম, সুইচগিয়ার, ট্রান্সফরমার, সিটি, পিটি)।
৪. ইলেক্ট্রিক্যাল মোটর কন্ট্রোল (স্টার, ডেল্ট, স্টারডেল্টা, রিভাস ফরোওয়াড)।
৪. ইলেক্ট্রিক্যাল মোটর কন্ট্রোল (স্টার, ডেল্ট, স্টারডেল্টা, রিভাস ফরোওয়াড)।
৫. বিভিন্ন প্রকার মেজারিং টুলস, হ্যান্ড টুলস ও সেফটি টুলস।
ক শ্রেণীর সিলেবাস ও সাজেশন
এই শ্রেণীর বৈদ্যুতিক কারিগরি পারমিট পরীক্ষায় ব্যাসিক ইলেকট্রিকসহ যেসকল যন্ত্রপাতি ৪০০ ভোল্টেজের উপরে চলে/কাজ করে এমন সব বিষয়ের উপর বেশি গুরুত্বআরোপ করা হয়। এক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া যেতে পারে।
১. ট্রান্সমিশন লাইন ও ডিস্টিবিউশন লাইন(কন্ডাকটর, ইনসুলেটর, ওয়্যার, ইত্যাদি)
২. জেনারেটর, ট্রন্সফারমার, সাব-স্টেশন (ইনপুট-আউপপুট কানেকশান, স্টার-ডেল্টা, পিএফআই প্যানেল, আর্থিং সিস্টেম, বুখরেজ রিলে, কনজারভেটর, ব্রিদার, সাব-স্টেশনের বিভিন্ন সেফটি ডিভাইস)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন