ট্রান্সফরমারের বিভিন্ন প্যারামিটার যেমন কোর লস, কপার লস, সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স, সমতুল্য রিয়্যাকট্যান্স, নো লোড কারেন্ট প্রভৃতি নির্ণয়ের জন্য ওপেন সার্কিট টেস্ট ও শর্ট সার্কিট টেস্ট করা হয়। এই আর্টিকেলের বিষয়বস্তু হচ্ছে ট্রান্সফরমারের শর্ট সার্কিট টেস্ট যা ক্লোজ সার্কিট টেস্ট নামেও পরিচিত।
নিচের তিনটি প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে ট্রান্সফরমারের শর্ট সার্কিট টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করা হবে।
ক. ট্রান্সফরমারের শর্ট সার্কিট টেস্ট কি?
খ. শর্ট সার্কিট টেস্ট কেন করা হয়?
গ. শর্ট সার্কিট টেস্ট কিভাবে করা হয়?
ক. ট্রান্সফরমারের শর্ট সার্কিট টেস্ট কি
ট্রান্সফরমারের লো-টেনশন সাইড শর্ট সার্কিট রেখে হাই টেনশন সাইডে বিভিন্ন টেস্টিং ইনস্ট্রুমেন্ট সংযুক্ত করে যে টেস্ট বা পরীক্ষা করা হয় তাই ক্লোজ সার্কিট টেস্ট বা শর্ট সার্কিট টেস্ট হিসেবে পরিচিত।
খ. শর্ট সার্কিট টেস্ট কেন করা হয়
ট্রান্সফরমারের প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি রেজিস্ট্যান্স ও রিয়্যাকট্যান্স এবং কপার লস নির্ণয়ের জন্য শর্ট সার্কিট টেস্ট করা হয়।
গ. শর্ট সার্কিট টেস্ট করার পদ্ধতি
শর্ট সার্কিট টেস্ট করার জন্য ট্রান্সফরমারের সাথে পরিমাপ করার যন্ত্রপাতি গুলো হাই -টেনশন সাইডে সংযুক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে ট্রান্সফরমারকে নিচের চিত্রের মতো করে প্রস্তুত করা হয়।
- ট্রান্সফরমারের হাই টেনশন সাইড শর্ট সার্কিট অবস্থায় রাখা হয়
- পাওয়ার পরিমাপের জন্য নো টেনশন কয়েলে একটি ওয়াটমিটার সংযুক্ত করা হয়।
- সিরিজে একটি অ্যাম্পিয়ার মিটার এবং
- ভোল্টেজ পরিমাপের জন্য একটি ভোল্টমিটার সংযোগ হয়
- এরপর পরীক্ষনীয় ইনপুটে অটো ট্রান্সফরমারের মাধ্যমে ভোল্টেজ ধীরে ধীরে বাড়িয়ে এমনভাবে প্রয়োগ করা হয় যাতে সার্কিটে রেটেড কারেন্ট প্রবাহিত হয়।
ট্রান্সফরমারের শর্ট সার্কিট টেস্ট |
ধরি ট্রান্সফরমারের শর্ট সার্কিট টেস্ট হতে নিচের পাঠগুলো পাওয়া যায়,
শর্ট সার্কিট ভোল্টেজ = $V_S_C$
শর্ট সার্কিট কারেন্ট = $I_S_C$
শর্ট সার্কিট পাওয়ার লস = $W_S _C$
প্রাইমারি ইনপুট ভোল্টেজ = $V _1$
প্রাইমারিতে প্রবাহিত কারেন্ট = $I_1$
প্রাইমারিতে সমতুল্য রেজিস্ট্যান্স = $R _0 _1$
প্রাইমারিতে সমতুল্য রিয়্যাকট্যান্স = $X _0 _1$
প্রাইমারিতে সমতুল্য ইম্পিড্যান্স = $Z _0 _1$
ট্রান্সফরমারের শর্ট সার্কিট টেস্ট করার সময় যে কারেন্ট প্রবাহিত হয় তা ফুল লোডে প্রবাহিত কারেন্টের সমান হয়ে থাকে। ফলে এই কারেন্ট যে কপার লস ঘটাবে তা ফুল লোড কপার লসের সমান হবে। কারন কপার লস, $W_C_u = I_S_C^2R_0_1$ হবে। ক্লোজ সার্কিট অবস্থায় রেটেড কারেন্ট প্রবাহ করতে হলে প্রয়োগকৃত ভোল্টেজ রেটেড ভোল্টেজের চেয়ে অনেক কম হতে হবে।ফলে ভোল্টেজের ফাংশন হওয়ায় নো-লোড কারেন্টের মান খুবই কম হবে যা নগন্য ধরা যায়। ফলে ওয়াট মিটারে যে পাঠ পাওয়া যাবে তা ট্রান্সফরমারের কপার লস নির্দেশ করবে।
সুতরাং ট্রান্সফরমারের কপার লস, $W_C_u = W_S_C$
আবার, $W_C_u = I_1^2R_0_1$ $[∵ \ I_1 = I_S_C ]$
$বা, \ R_0_1 = W_C_u/I_1^2$
$∴ \ Z_0_1 = V_1/I_1$ $[∵ \ V_1 = V_S_C ]$
$∴ \ X_0_1 = √{Z_0_1^2 - R_0_1^2}$
এখানে প্যারামিটার নির্ণয়ের জন্য বেশ কয়েকটি গানিতিক সমীকরণ দেখানো হয়েছে যা একসাথে এলোমেলো বা ঝামেলা মনে হতে পারে। তবে নিচের ট্রান্সফরমারের সমতুল্য সার্কিটের চিত্র হতে সমীকরণগুলো বুঝতে সহজ হবে।
লো-টেনশন কয়েল শর্ট ও হাই-টেনশন কয়েলে যন্ত্রপাতি সংযোগ করার কারণ
কপার লস কারেন্টের ফাংশন হওয়ায় ট্রান্সফরমারের শর্ট সার্কিট টেস্ট বা ক্লোজ সার্কিট টেস্ট করার সময় রেটেড কারেন্ট প্রয়োগ করতে হয়। লো-সাইডে যন্ত্রপাতি সংযোগ করে পরীক্ষা চালাতে হলে রেটেড কারেন্ট প্রবাহ করতে হবে। ফলে সংযুক্ত যন্ত্রপাতিও উচ্চ কারেন্টের হতে হবে। তাছাড়া লো-সাইডে কয়েলের রেজিস্ট্যান্স ও রিয়্যাকট্যান্স কম হওয়ায় পরীক্ষা করার সময় নো-লোড কারেন্ট নগন্য ধরা যাবে না। ফলে বিভিন্ন প্যারামিটার নির্ণয়ের হিসাব জটিল হয়ে পরবে। তাই ট্রান্সফরমারের শর্ট/ক্লোজ সার্কিট টেস্ট করার সময় লো-সাইড শর্ট/ক্লোজ সার্কিট এবং হাই সাইডে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযোগ করা হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন