পদার্থের উপর প্রযুক্ত চাপ বা পিড়ন পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত একটি ট্রান্সডিউসারের নাম হচ্ছে স্ট্রেইন গেজ। অন্যভাবে স্ট্রেইন গেজ এক ধরনের প্যাসিভ ট্রান্সডিউসার যা কোন স্থির বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল, টান, চাপ বা পীড়নকে পরিমাপ যোগ্য ইলেকট্রিক্যাল রেজিস্ট্যান্সে রূপান্তর করে। স্ট্রেইন গেজ যান্ত্রিক ক্রিয়া পরিমাপে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত একটি ট্রান্সডিউসার। বহুল প্রচলিত একটি স্ট্রেইন গেজ হচ্ছে বিশেষ নমুনায় সাজানো পাতলা চিকন ধাতব ফয়েলের তৈরি স্ট্রেইন গেজ। এই স্ট্রেইন গেজটি রেজিসটিভ ফয়েল স্ট্রেইন গেজ নামে পরিচিত।
স্ট্রেইন গেজ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। এই পোস্টে ধাতব ফয়েল দ্বারা তৈরি স্ট্রেইন গেজ নিয়ে আলোচনা করা হবে।
রেজিসটিভ ফয়েল স্ট্রেইন গেজের মূলনীতি ও গঠন
স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে রেখে ধাতব পদার্থের উপর টান বা বল প্রয়োগ করলে এর দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থচ্ছেদ পরিবর্তন (সংকোচন-প্রসারণ) হওয়ার পাশাপাশি রেজিস্টিভিটিও পরিবর্তন ঘটে। এই নীতির উপর ভিত্তি করে ইলেকট্রিক্যাল রেজিস্ট্যান্স পরিবর্তন পরিমাপের মাধ্যমে পদার্থের উপর প্রযুক্ত যান্ত্রিক পীড়ন নির্ণয় করা হয়। নিচের চিত্রে একটি স্ট্রেইন গেজের সংকোচন-প্রসারণ দেখানো হলো।
রেজিসটিভ ফয়েল স্ট্রেইন গেজ |
নমনীয় প্লাস্টিকের ভিত্তির মধ্যে ধাতব ফয়েলের তার বিশেষ প্যাটার্নে সাজিয়ে তৈরি হয় স্ট্রেইন গেজ। এরপর যে পদার্থের উপর প্রযুক্ত টান বা চাপ পরিমাপ করতে হবে অর্থাৎ নমুনা পদার্থের সাথে স্ট্রেইন গেজটি শক্ত কোন আঠা দিয়ে দৃঢ় ভাবে আটকে দেয়া হয়। নমুনা পদার্থটির যেকোনো একটি দিক সাধারণত স্থির কোন বস্তুর সাথে আটকানো থাকে। স্ট্রেইন গেজ নমুনা পদার্থের সাথে এমনভাবে আটকানো হয় যাতে ধাতব ফয়েলের তারগুলো নমুনার সাথে লম্বালম্বিভাবে অবস্থান করে। এখন নমুনা পদার্থে কোন চাপ প্রয়োগ করলে এর বিকৃতি ঘটবে। ফলে এই বিকৃতি ধাতব ফয়েলের তারগুলোকে সংকুচিত বা প্রসারিত করবে। যা উপরে উল্লেখিত নীতি অনুযায়ী রেজিস্ট্যান্সের পরিবর্তনে প্রকাশ পাবে।
নমুনার যে অংশে স্ট্রেইন গেজ লাগানো হবে সে স্থান (খুব সূক্ষ্ম শিরিষ কাগজের সাহায্যে ঘষে) খুবই মসৃণ করতে হয়। এছাড়া খেয়াল রাখতে হবে যাতে ঐ স্থানে কোন তেল বা তেলজাতীয় পদার্থ লেগে না থাকে। প্রয়োজনে কোন দ্রাবক পদার্থ দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এবং এ স্থানে জারণ বা দূষণ এড়াতে যত দ্রুত সম্ভব স্ট্রেইন গেজ বিযুক্ত করতে হবে। উল্লেখ্য এব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে স্ট্রেইন গেজ নমুনার পৃষ্ঠের সাথে ভালোভাবে আটকাবে না। ফলে পরিমাপে ত্রুটি দেখা দিবে এবং নির্ভরযোগ্য পরিমাপ পাওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পাবে।
নিম্নমানের রেজিস্টেন্স পরিবর্তন পরিমাপ একটু কষ্টসাধ্য বিষয়। তাই রেজিস্টেন্স পরিবর্তন পরিমাপের জন্য স্ট্রেইন গেজকে একটি ডিসি ব্রিজ সার্কিট এর সাথে সংযুক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে ডিসি ব্রিজ সার্কিটটি হুইটস্টোন ব্রিজ সার্কিট। এর ফলে খুব অল্প মানের রেজিস্ট্যান্স পরিবর্তনও খুব সহজে পরিমাপ করা যায়।
স্ট্রেইন গেজের উপর তাপমাত্রার প্রভাব প্রভাব
স্ট্রেইন গেজ এর উপর অন্যান্য প্রভাব
- স্ট্রেইন গেজ খুব সহজে আদ্রতা দ্বারা প্রভাবিত হয়, তাই স্ট্রেইন গেজ এর লিড গুলো ভালোভাবে ইন্সুলেট করা থাকে।
- স্ট্রেইন গেজ নমুনার যে দলই লাগানো হয় তা খুব ভালোভাবে পরিষ্কার ও মসৃণ করে নিতে হয়; তা না হলে ত্রুটিপূর্ণ ফলাফল নির্ধারিত।
- এটি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ইন্টারফিয়ারেন্স দ্বারা প্রভাবিত হয়।
- ওভারলোড হলে স্ট্রেইন গেজ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- এটি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় তাপমাত্রা দ্বারা।
স্ট্রেইন গেজের ব্যবহার
স্ট্রেইন গেজ কাঠামোগত পীড়ন নির্ধারণ বা পরীক্ষা করতে, লোড সেল, চাপ, টর্ক, যান্ত্রিক ভাইব্রেশন ইত্যাদি পরিমাপের ট্রান্সডুসার তৈরিতে ব্যবহার হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন