সুপারকন্ডাক্টর ( বা অতিপরিবাহী ) পদার্থবিজ্ঞানের একটি অতি আশ্চর্যজনক ঘটনার ফসল। চিরাচরিত পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে ব্যাখ্যা করা যাায় না, পাঁচটি নোবেল পুরস্কারও যার গবেষণাকে কৌতুহলে রেখেছে, তা কি করে কোন স্বাভাবিক ঘটনা হতে পারে। এর আবিষ্কার ব্যতীত কোয়ান্টাম কম্পিউটার অথবা অতি উচ্চ চৌম্বকক্ষেত্র ( যা MRI ম্যাশিনে ব্যবহার হয় ) সম্ভব হতো না। সম্ভব হতো না আরও কিছু আশ্চর্যজনক আবিস্কারের। আধুনিক গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচনকারী অতিপরিবাহী এর কিছু অনন্য তথ্য দিয়ে সাজানো ভোল্টেজ ফ্যাক্টস্ এর আজকের পোস্ট।
অতিপরিবাহী ও অতিপরিবাহিতা কাকে বলে
অতিপরিবাহীতা হ'ল নির্দিষ্ট পদার্থে পরিলক্ষিত কিছু ভৌত বৈশিষ্ট্যের সেট, যার ফলে পরিবাহীর মধ্যে কোন প্রকার ইলেকট্রিক্যাল রোধ থাকে না আর চৌম্বক ক্ষেত্রের ফ্লাক্সকে সম্পূর্নরুপে অপসারণ (এর মধ্যে ঢুকতে দেয় না ) করে। যে পদার্থে এ ধরনের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় তাকে অতিপরিবাহী বলে।
অতিপরিবাহীর সূচনা কথা
১৯১১ সালে অতিশৈত্যে কঠিন পারদের ইলেকট্রিক্যাল বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণের সময় Heike Kamerlingh Onnes প্রথম আবিস্কার করেন অতিপরিবাহিতা। তিনি লক্ষ্য করেন ৪.২ K তাপমাত্রায় পারদের ইলেকট্রিক্যাল রোধ হঠাৎ করেই অদৃশ্য হয়ে যায়। এরপর অতিপরিবাহী এবং অতিপরিবাহিতা নিয়ে চলতে থাকে নানা কৌতুহলী আবিস্কারের খোজ। পরবর্তী বিভিন্ন গবেষণায় আরও কিছু অতিপরিবাহী এবং তৎসংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব আবিস্কার হতে থাকে।সাত-আট দশকে বিভিন্ন পদার্থে অতিপরিবাহিতা আবিস্কারের খোজ তাপমাত্রা বাড়াতে পেরেছে মাত্র ২০ ক্যালভিন। তুলনামূলক বেশি তাপমাত্রার(৯০K) অতিপরিবাহী ব্যবহারের সূচনা ঘটে ১৯৮৬ সালে সিরামিক পদার্থের অতিপরিবাহিতা আবিস্কারের মাধ্যমে। এজন্য ১৯৮৭ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে Bednorz এবং Müller অর্জন করে নোবেল পুরস্কার। এর আগে প্রচলিত অতিপরিবাহী এতো উচ্চ তাপমাত্রায় অতিপরিবাহিতা প্রদর্শন করতো না। এর ফলে শীতলীকারক হিসেবে সস্তা ও সহজলভ্য নাইট্রোজেন ব্যবহার করেই অতিপরিবাহী পদার্থের জন্য প্রয়োজনীয় ক্রিটিকাল তাপমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়। যা সুপারকন্ডাক্টর সম্পর্কে বিভিন্ন গবেষণা ও এর ব্যবহারিক প্রয়োগকে সহজ করে তোলে।
উচ্চ তাপমাত্রার অতিপরিবাহী পদার্থের একটি তালিকা নিচে দেয়া হলো
এছাড়া 2014-15 এবং 2019 সালে আরো কিছু উচ্চ তাপমাত্রার অতিপরিবাহী আবিষ্কৃত হয় যা মূলত উচ্চচাপে অতিপরিবাহিতা প্রদর্শন করে। যেমন হাইড্রোজেন সালফাইড (H2S) এবং ল্যান্থানাম হাইড্রাইড (LaH10) যথাক্রমে 80 কেলভিন ও 250 কেলভিন তাপমাত্রায় এবং 150 গিগাপ্যাস্ক্যাল ও 170 গিগাপ্যাস্ক্যাল চাপে অতিপরিবাহিতা প্রদর্শন করে। উচ্চ চাপের কারণে এ ধরনের অতিপরিবাহী গুলো ব্যবহারিক কাজের জন্য উপযোগী নয়।
অতিপরিবাহির বৈশিষ্ট্য
অতিপরিবাহী নিয়ে অনেক কথা হয়ে গেল এখন এর কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জেনে নিই।১৷ | শূন্য ইলেকট্রিক্যাল রেজিস্ট্যান্স |
২৷ | চুম্বক ক্ষেত্রের ফ্লাক্স প্রবেশ না করা |
৩৷ | ক্রিটিকাল তাপমাত্রা |
৪৷ | ক্রিটিকাল চৌম্বক ক্ষেত্র |
৫৷ | ক্রিটিকাল কারেন্ট |
১। শূন্য ইলেকট্রিক্যাল রেজিস্ট্যান্স
অতিপরিবাহী অবস্থায়, এর উপাদান বৈদ্যুতিক রোধ শূন্য (অসীম পরিবাহিতা) প্রদর্শন করে। যখন অতিপরিবাহী উপাদানের নমুনাটি তার ক্রিটিকাল তাপমাত্রার নীচে শীতল হয়, তখন এর প্রতিরোধ হঠাৎ শূন্যে হ্রাস পায়। উদাহরণস্বরূপ পারদ 4.2K এর নীচে শূন্য রোধ দেখায়।
২। চুম্বক ক্ষেত্রের ফ্লাক্স প্রবেশ না করা
এক্ষেত্রে কোন চৌম্বক ক্ষেত্রের ফ্লাক্স অতিপরিবাহী পদার্থের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে না। এই প্রতিক্রিয়া টি আবিষ্কারকের নাম অনুসারে মেজনার (Meissner) প্রতিক্রিয়া নামে পরিচিত।
৩। ক্রিটিকাল তাপমাত্রা
যে তাপমাত্রায় কোন অতিপরিবাহী পদার্থ সাধারণ পরিবাহী হতে অতিপরিবাহীতে রূপান্তরিত হয় তাকে ক্রিটিকাল তাপমাত্রা বলে।
৪। ক্রিটিকাল চৌম্বক ক্ষেত্র
চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে অতিপরিবাহিতা প্রভাবিত হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের (বাহ্যিক অথবা অতিপরিবাহীর অভ্যন্তরীণ প্রবাহিত কারেন্টের জন্য উত্পাদিত) একটি নির্দিষ্ট মানের জন্য এর মধ্যে রাখা অতিপরিবাহী পদার্থের অতিপরিবাহী অবস্হা/ফেজ ভেঙে যায়। ফলে নমুনাটি একটি সাধারণ পরিবাহীর মতো আচরণ শুরু করে। চৌম্বক ক্ষেত্রের যে নির্দিষ্ট মানে অতিপরিবাহী সাধারণ অবস্থায় ফিরে আসে, তাকে ক্রিটিক্যাল চৌম্বক ক্ষেত্র বলে। ক্রিটিক্যাল চৌম্বক ক্ষেত্রের মান তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে। তাপমাত্রা হ্রাস পেলে (ক্রিটিক্যাল তাপমাত্রার নীচে) ক্রিটিক্যাল চৌম্বক ক্ষেত্রের মান বৃদ্ধি পায়।
৫। ক্রিটিকাল কারেন্ট
অতিপরিবাহী পদার্থে প্রবাহিত কারেন্টের দরুন লেন্জের সূত্র অনুযায়ী চৌম্বক ক্ষেত্র উৎপন্ন হয়। এই প্রবাহিত কারেন্ট যদি ক্রিটিকাল চুম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে তবে তাকে ক্রিটিকাল কারেন্ট বলে। এক্ষেত্রে ক্রিটিকাল কারেন্ট বাহ্যিক চৌম্বক ক্ষেত্র এবং ক্রিটিকাল তাপমাত্রার নিচের তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে।
waiting for comments.....
উত্তরমুছুনঅতিপরিবাহি কাকে বলে
মুছুন