প্রাথমিক আলোচনা
পদার্থের পরমাণু যেসকল কণা দ্বারা গঠিত তার মধ্যে তিনটি মৌলিক কণিকা হচ্ছে ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন। প্রোটন ও নিউট্রন পরমাণুর কেন্দ্রের দিকে তুলনামূলক একটি ক্ষুদ্র অংশে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে যাকে নিউক্লিয়াস বলে আর ইলেকট্রন বিভিন্ন শক্তিস্তরে নিউক্লিয়াসকে আবর্তন করতে থাকে। প্রয়োজনীয় শক্তি গ্রহন/বর্জন করে (তাপ, চাপ বা অন্য উপায়ে শক্তি গ্রহন বা বর্জন করে) ইলেকট্রন উচ্চ বা নিম্ন শক্তিস্তরে যেতে পারে।
ইলেকট্রিক চার্জ বলতে কী বোঝায়
বৈদ্যুতিক আধান (ইংরেজিতে electric Charge বা চার্জ) বা সংক্ষেপে আধান হচ্ছে পরমাণুর একটি মৌলিক বৈশিষ্ট যে কারণে একটি কণা/বস্তু তড়িৎ ক্ষেত্রে বা ইলেকট্রিক ফিল্ডে স্থাপন করলে একটি বলের অনুভব করে। চার্জকে q দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
তড়িৎ আধান বা ইলেকট্রিক চার্জের প্রকৃতি
১৮ শতকে বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা দ্বারা এটি প্রমাণ করতে সক্ষম হয় যে, তড়িৎ আধান দুই ধরনের। যথা- ধনাত্মক আধান $(+q)$ এবং ঋণাত্মক আধান $(-q)$.
পরবর্তীতে এটি প্রমাণিত হয় যে, পদার্থের মৌলিক কনিকাগুলার মধ্যে প্রোটন ধনাত্মক চার্জ বিশিষ্ট এবং ইলেকট্রন ঋণাত্মক চার্জ বিশিষ্ট। আর নিউট্রনের কোন চার্জ নেই। যে পদার্থের ইলেকট্রনের আধিক্য বেশি তা ধনাত্মক চার্জে এবং যে পদার্থে ইলেকট্রনের ঘাটতি থাকে তা ঋণাত্মক চার্জে বা চার্জিত বস্তুতে পরিণত হয়
- সমজাতীয় চার্জ পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। অর্থাৎ দুটি ধনাত্মক চার্জ অথবা দুটি ঋণাত্মক চার্জ কাছাকাছি স্থাপন করলে পরস্পরকে বিকর্ষণ করবে।
- ভিন্নজাতীয় চার্জ পরস্পরকে আকর্ষণ করে। অর্থাৎ একটি ধনাত্মক ও একটি ঋনাত্মক চার্জ কাছাকাছি রাখলে চার্জ দুটি পরস্পরকে আকর্ষণ করবে।
ইলেকট্রিক চার্জ সৃষ্টির কারন
প্রোটন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের মধ্যে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। ফলে কোন পরমাণুতে ইলেকট্রনের ঘাটতি ঘটলে তাতে তুলনামূলক প্রোটনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ফলে পরমাণুটির ধনাত্মক আধান জমা হয় বলে ধরে নিয়ে যায়। আবার কোন কারনে যদি কোন পরমাণু অতিরিক্ত ইলেকট্রন গ্রহন করে তাহলে তা ঋণাত্মক চার্জ সঞ্চয় করে।
ইলেকট্রিক চার্জ পরিমাপের একক
চার্জ পরিমাপের SI একক কুলম্ব। একে C দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
এক কুলম্ব বলতে কি বুঝায়
এক অ্যাম্পিয়ার কারেন্ট এক সেকেন্ড যাবত প্রবাহিত হলে যে পরিমান চার্জ স্থানান্তরিত হয় তাকে এক কুলম্ব চার্জ বলে। ইলেকট্রনের চার্জের সাথে তুলনা করলে এক কুলম্ব চার্জে মোট $6.24×10\ ^18$ টি ইলেকট্রনের চার্জ থাকে।
মৌলিক কণাগুলো মধ্যে ইলেকট্রনের চার্জ $-1.6×10\ ^{-19}C$ এবং প্রোটনের চার্জ $1.6×10\ ^{-19}C$, এছাড়া নিউট্রনের কোন চার্জ থাকে না।
কুলম্বের সূত্র
দুটি চার্জিত বস্তুর মধ্যকার আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলের মান চার্জদ্বয়ের গুণফলের সমানুপাতিক এবং চার্জ দুটির মধ্যকার দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।
তড়িৎ আধান সম্পর্কিত কুলম্বের সূত্র |
ধরি, $q_1$ ও $q_2$ দুটি চার্জ $r$ দূরত্বে অবস্থান করে। এদের মধ্যকার আকর্ষণ বল, $F$ হলে কুলম্বের সূত্র অনুযায়ী পাই,
এখানে, k একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক এবং $k =1/{4πε_0}$
যেখানে, শূন্য মাধ্যমের ভেদন যোগ্যতা, $ε_0 = 8.854×10^{-12}C^2N\ ^{-1}m^{-2}$
উল্লেখ্য কুলম্বের সূত্র দুই বা ততোধিক বিন্দু চার্জের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যেখানে মহাকর্ষ বল নগণ্য। দুইয়ের অধিক বস্তুর ক্ষেত্রে বলের মান ভেক্টর যোগফল দ্বারা নির্ধারিত হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন